আপনার করযোগ্য আয় না থাকলে স্থায়ীভাবে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে পারবেন। বাংলাদেশের নিয়মিত আয়কর দাতা সহ প্রায় সকলের কাছেই টিন সার্টিফিকেট Tin certificate শব্দটি পরিচিত। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বর্তমান ডিজিটাল যুগে, অনেক সময় অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের টিন নাম্বার এবং টিন সার্টিফিকেট Tin certificate প্রয়োজন হয়ে যায়। অনেকে বাধ্যতামূলক আয়কর দাতা না হয়েও, বিভিন্ন সেবামূলক কাজের জন্য সাময়িকভাবে টিন সার্টিফিকেট Tin certificate তুলতে হয়। আবার পরবর্তীতে সেই টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার প্রয়োজন হয়। আজকে আমরা এই লেখাটিতে টিন সার্টিফিকেট বাতিল কিভাবে করবেন সে বিষয়ে আলোচনা করব।
আয়কর কি? টিন সার্টিফিকেট কেন প্রয়োজন?(tin certificate)
সরকারি বিভিন্ন খাতে আয়কর প্রদানের জন্য অথবা আমাদের ব্যবসায়ী কাজের জন্য এবং নানান প্রয়োজনে বাধ্যতামূলকভাবে টিন সার্টিফিকেট Tin certificate তৈরি করতে হয়। আমরা যেভাবেই ইনকাম করি না কেন, বছরে ২ লক্ষ টাকার উপরে ইনকাম হিসাবে, আমাদের ইনকামের একটা কমিশন সরকারী খাতে জমা দিতে হয়। এটাকেই বলা হয় আয়কর বা ইনকাম ট্যাক্স। আয়কর দেওয়ার জন্য টিন সার্টিফিকেট Tin certificate প্রয়োজন হয়।এছাড়াও ব্যাংকিং বিভিন্ন কাজের জন্য বা আমাদের দেশের নানান কাজের সুবিধা নেওয়ার জন্য, টিন সার্টিফিকেট Tin certificate প্রয়োজন হয়।
টিন সার্টিফিকেট স্থায়ীভাবে বন্ধ করা কেন প্রয়োজন? (Tin certificate)
আপনি যদি কোনো সেবামূলক কাজের প্রয়োজনে টিন সার্টিফিকেট Tin certificate তুলে থাকেন, অথবা নিজের খেয়াল-খুশি মতো টিন সার্টিফিকেট Tin certificate খুলে থাকেন, এবং আপনি যদি সেই টিন সার্টিফিকেট Tin certificate এর আয়কর রিটার্ন জমা না করেন, ভবিষ্যতে যদি আপনি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলেন অথবা অন্য কোন উপায়ে আপনি অনেক টাকা পয়সার মালিক হয়ে যান, সেখানে আপনাকে টিন সার্টিফিকেট Tin certificate এর প্রয়োজন হবে। তখন যদি আয়কর রিটার্ন জমা দিতে চান, তাহলে আপনাকে যে তারিখ থেকে এই টিন সার্টিফিকেট Tin certificate উত্তোলন করেছেন, সেই তারিখ থেকে চক্রবর্তী হারে জরিমানা দিয়ে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে !!
মনে রাখবেন, একজন ব্যক্তির নামে শুধু একটি মাত্র টিন সার্টিফিকেট তৈরি হয়ে থাকে। এর কারন, টিন সার্টিফিকেট Tin certificate তৈরি করার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র প্রয়োজন হয়। যেহেতু জাতীয় পরিচয় পত্র সার্ভারের সাথে ই-টিন সার্ভারের সংযোগ থাকে, তাই একজন ব্যক্তি তার জীবনে শুধু একটি টিন সার্টিফিকেট Tin certificate তৈরি করতে পারে। আপনি চাইলেও পূর্বের টিন সার্টিফিকেট Tin certificate গোপন করে নতুন টিন সার্টিফিকেট তৈরি করতে পারবেন না।
এজন্যই, আপনার টিন সার্টিফিকেট Tin certificate টি যদি আপনি এমনিতেই খুলে থাকেন অথবা আপনার টিন সার্টিফিকেট Tin certificate যদি প্রয়োজন না হয় অথবা আপনার ব্যবসা ছিল কিন্তু বর্তমানে ব্যবসা নেই সেক্ষেত্রে আপনার টিন সার্টিফিকেট Tin certificate বাতিল করার প্রয়োজন আছে। যদি কারো নামে সম্পত্তি থাকে আর তিনি মৃত্যুবরণ করেন তার নামে যদি টিন সার্টিফিকেট Tin certificate থেকে থাকে সেক্ষেত্রেও টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার প্রয়োজন রয়েছে। তা না হলে অনেক সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা আছে।
কি কি কারনে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করা যায়?
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার যথাযথ কারণ সঠিকভাবে উল্লেখ করতেন না পারলে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করা যায় না। টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য কিছু কারণ ও শর্ত রয়েছে। টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার শর্ত গুলো নিম্নরূপ।
◾ করদাতা মারা গেলে টিন সার্টিফিকেট চালু করার মত যদি কোন কার্যক্রম না থাকে তাহলে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার আবেদন করা যাবে। এক্ষেত্রে করদাতার ওয়ারিশগণ টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য আবেদন করবেন।
◾ বিদেশি নাগরিক non-residential যাদের বাংলাদেশে স্থায়ী কোনো ভিত্তি নেই। সামরিক আয়কর প্রদানের প্রয়োজনে টিন সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছিলেন, এখন আর প্রয়োজন নেই। সেক্ষেত্রে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার আবেদন করতে পারবেন।
◾ বিশেষ কোনো কারণে টিন সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন বর্তমানে করযোগ্য কোন আয় না থাকায় টিন সার্টিফিকেট বাতিল এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে পরপর তিন বছর শূন্য রিটার্ন দাখিল করতে হবে। তারপর zero return শুন্য রিটার্নের কপি নিয়ে টিন সার্টিফিকেট বাতিল আবেদন করতে হবে।
বাংলাদেশের নাগরিকের টাকা জমা রেখে লাভবান হওয়ার জন্য একটি আস্থার জায়গা হল সরকারি সঞ্চয়পত্র। সরকারি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কোনো ঝুঁকি নেই। আপনার কাছে টাকা থাকলেই আপনি ইচ্ছে মত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারবেন না। বাংলাদেশে প্রচলিত চার ধরনের সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম ও শর্ত অনুযায়ী আপনি যেটার যোগ্য শুধু সেটি কিনতে পারবেন। এখানে প্রতিটি সঞ্চয়পত্রের শর্ত, নিয়ম এবং যোগ্যতা বর্ণনা করা হল।
টিন সার্টিফিকেট বাতিল আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।
১। আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সাথে নিতে হবে।
২। আপনার টিন সার্টিফিকেট এর একটি ফটোকপি নিতে হবে।
৩। যদি আয়কর প্রদান করে থাকেন আয়কর প্রদানের ফটোকপি সাথে নিতে হবে।
৪। যদি কারো নামে টিন সার্টিফিকেট আছে এবং সে মৃত্যুবরণ করলে তার মৃত্যুর সনদ সাথে নিতে হবে।
৫। কি কারনে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে চান তার উপযুক্ত প্রমান সাথে নিতে হবে।
আপনার সমস্ত কাগজপত্র এবং প্রমাণাদি উপকার বিভাগের অধীনে জমা দিতে হবে। তারা আপনাকে একটি ফর্ম দিবে, আপনাকে তথ্যের ভিত্তিতে ফর্মটি পূরণ করে জমা দিতে হবে। আপনার টিন সার্টিফিকেট Tin certificate বাতিল হয়ে গেলে উপকর অফিস আপনাকে একটি কপি দিয়ে দিবে, অথবা পরবর্তীতে আপনাকে গিয়ে জেনে আসতে হবে আপনার টিন সার্টিফিকেট বাতিল হয়েছে কিনা।
উপরোক্ত নিয়মমাফিক আবেদন করে সমস্ত কাগজপত্র জমা দিয়ে আপনার অপ্রয়োজনীয় টিন সার্টিফিকেট Tin certificate বাতিল করতে পারবেন।
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নিয়ম।
উপরোক্ত তথ্য আলোচনার প্রেক্ষিতে আপনি যদি এখন মনে করেন, আপনার টিন সার্টিফিকেট বাতিল করা প্রয়োজন এবং আপনি টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে চান। তাহলে আপনাকে উপকর অফিসে গিয়ে (Income Tax Office) টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য আবেদন করতে হবে। মনে রাখবেন আমরা কিন্তু অনলাইনের মাধ্যমেই টিন সার্টিফিকেট তৈরি করতে পারি কিন্তু টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে চাইলে সেটা অনলাইনে করা সম্ভব না। টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য আপনাকে আপনার টিন সার্টিফিকেট-এ যে উপকরণ অফিসের ঠিকানা দেওয়া আছে। সেই ঠিকানা মোতাবেক গিয়ে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র এবং প্রমাণাদি উপকার বিভাগের অধীনে জমা দিতে হবে। তারা আপনাকে একটি ফর্ম দিবে, আপনাকে তথ্যের ভিত্তিতে ফর্মটি পূরণ করে জমা দিতে হবে। আপনার টিন সার্টিফিকেট বাতিল হয়ে গেলে উপকর অফিস আপনাকে একটি কপি দিয়ে দিবে, অথবা পরবর্তীতে আপনাকে গিয়ে জেনে আসতে হবে আপনার টিন সার্টিফিকেট বাতিল হয়েছে কিনা।
শেষ কথা
উপরোক্ত নিয়মমাফিক আবেদন করে সমস্ত কাগজপত্র জমা দিয়ে আপনার অপ্রয়োজনীয় টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে পারবেন। কোন করদাতা যদি মৃত্যুবরণ করেন তাঁর টিন সার্টিফিকেট বাতিল করা যৌক্তিক বিষয়। যদি আপনার করযোগ্য আয় না থাকে, কিন্তু রিটার্ন জমা দেওয়া আপনার জন্য ঝামেলা মনে হচ্ছে এজন্য আপনি টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে চান তাহলে আমার পরামর্শ থাকবে পরপর তিন বছর শূন্য রিটার্ন দাখিল করুন, এরপর থেকে আপনাকে রিটার্ন জমা দিতে হবে না। আশাকরি টিন সার্টিফিকেট বাতিলের বিষয়ে আপনি যা জানতে চেয়েছেন উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনার তথ্য গুলো পেয়েছেন। যদি আপনার আরও কোন তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনার পরিচিত কোন আয়কর আইন বিশেষজ্ঞ এর কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন। ধন্যবাদ।
টিন সার্টিফিকেট সংক্রান্ত আরো কিছু প্রশ্ন ও উত্তর।
অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট বাতিল আবেদনের নিয়ম কি?
অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট বাতিল আবেদন করা যায় না। টিন সার্টিফিকেট বাতিল আবেদন করার জন্য আপনার টিন সার্টিফিকেট এ যে কর অফিসের ঠিকানা দেওয়া আছে, সেখানে উপস্থিত হহয়ে উপযুক্ত প্রমান সহ সকল কাগজপত্র দাখিল করে লিখিত আবেদন করতে হবে।
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে কত টাকা খরচ হয়?
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য সরকার ঘোষিত কোন নির্ধারিত ফি নেই। এতে কোন ধরনের টাকা পয়সার প্রয়োজন হয় না। টিন সার্টিফিকেট আপনি যেভাবে ফ্রি তৈরি করেছেন, টিন সার্টিফিকেট বাতিল সেভাবেই ফ্রী করা যায়।
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য করদাতাকে আয়কর অফিস সশরীরে উপস্থিত হতে হবে?
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার জন্য করদাতাকে আয়কর অফিস সশরীরে উপস্থিত হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। তিনি চাইলে যেকোনো প্রতিনিধি পাঠিয়ে উপযুক্ত কাগজপত্র জমা দিয়ে টিন সার্টিফিকেট বাতিলের আবেদন করতে পারবেন।
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার পর পরবর্তীতে নতুন টিন সার্টিফিকেট নিলে, টিন নাম্বার কি নতুন হবে নাকি পুরনো টিন নাম্বার বহাল থাকবে?
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার পর পুনরায় টিন সার্টিফিকেট চালু করলে নতুন টিন নাম্বার দেওয়া হয়না, আগেরটির নাম্বারটি সচল হয়ে যায়।
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার পর টিন সার্টিফিকেট দিয়ে কেনা সঞ্চয়পত্র কি বাতিল হয়ে যাবে?
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করা হলেও টিন সার্টিফিকেট দিয়ে কেনা সঞ্চয় পত্র বাতিল হবে না। তবে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার পরে এই টিন নাম্বারটি আর ব্যবহার যোগ্য থাকবে না। এই টিন সার্টিফিকেট দিয়ে নতুন করে দুই লক্ষ বা তার অধিক পরিমাণ কোনো সঞ্চয় পত্র ক্রয় করা যাবে না।