আমরা যারা ইতিমধ্যে জাতীয় পরিচয় পত্র, ভোটার আইডি কার্ড বা এনআইডি কার্ড হাতে পেয়েছি, তাদের অনেকেরই জাতীয় পরিচয় পত্র, এনআইডি কার্ড বা ভোটার আইডি কার্ডে নানারকম ভুলভ্রান্তি হয়েগেছে। কারো নিজ নামের ভুল,কারো পিতা-মাতার নামের ভুল, জন্মতারিখ এবং স্থায়ী অস্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি ভুল হয়েছে।
জাতীয় পরিচয় পত্র, ভোটার আইডি কার্ড বা এনআইডি কার্ডে ভুল তথ্য থাকলে, সেই এনআইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে জাতীয় বা সরকারী সেবা মূলক কাজ করতে গেলে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাই জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার আইডি কার্ড বা এনআইডি কার্ডে ভুল থাকলে এটি যত দ্রুত সম্ভব সংশোধন করা জরুরি।
সরকার অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য বিশেষ সুযোগ রেখেছেন। যথাযথ প্রমাণ সহ অনলাইনে আবেদন করলে মাত্র ১৫থেকে ২০ দিনের মধ্যেই জাতীয় জাতীয় পরিচয় পত্র এবং ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করা যায়।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে অনলাইনে খুব সহজে, জাতীয় পরিচয় পত্র NID ভোটার আইডি কার্ড বা এনআইডি কার্ডে ভুল থাকলে সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে। জাতীয় পরিচয় পত্র, ভোটার আইডি কার্ড বা এনআইডি কার্ডের বিভিন্ন ধরনের ভুলের জন্য কি কি ধরনের প্রমান পত্র লাগবে এবং কম্পিউটার অথবা মোবাইল দিয়ে অনলাইনে কিভাবে সংশোধনের জন্য আবেদন করবেন এখানে বিস্তারিত আলোচনা করছি।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের প্রাথমিক ধারণা।
NID ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য সরকারী এই https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। ওয়েব সাইটে ঢোকার পর আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর, জন্মতারিখ, ও ঠিকানা দিয়ে একটি একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করুন। একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে ওয়েবসাইটে একাউন্ট থেকে লগইন করুন। আপনার যে প্রোফাইল আছে সেখানে যেসব তথ্য ভুল আছে তা সংশোধন করুন। সংশোধন হয়ে গেলে সংশোধন ফি জমা দিয়, সংশোধনের জন্য যে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে সেগুলো আপলোড করে আবেদনটি সাবমিট করুন। আবেদনটি অনুমোদন হয়ে গেলে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন হয়ে যাবে।
জাতীয় পরিচয় পত্র NID ভোটার আইডি কার্ড এ যেসব তথ্য সংশোধন করা যায়।
◾ ভোটার আইডি কার্ড বা এনআইডি কার্ডের নাম সংশোধন।
◾ ভোটার আইডি কার্ড বা এনআইডি কার্ডের জন্ম তারিখ সংশোধন।
◾ ভোটার আইডি কার্ড বা এনআইডি কার্ডের মায়ের নাম সংশোধন।
◾ ভোটার আইডি কার্ড বা এনআইডি কার্ডে বাবার নাম সংশোধন।
◾ ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন।
◾ ভোটার আইডি কার্ড বা এনআইডি কার্ডের অন্যান্য তথ্য সংশোধন।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কি কি লাগে?
◾ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ।
◾ ডিজিটাল বা অনলাইন জন্ম সনদ।
◾ পাসপোর্ট কপি।
◾ ড্রাইভিং লাইসেন্স কপি।
◾ এমপিও শীট বা সার্ভিস বইয়ের কপি।
উপরোক্ত এসকল কাগজপত্রের যে কোনো দুটি ডকুমেন্ট দিয়ে NID জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করা যায়।
যদি কারো উপরোক্ত এসকল ডকুমেন্ট না থাকে ওই ব্যক্তির জন্য করণীয় কি??
NID জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য উপরোক্ত এসকল কাগজপত্র না থাকলে যেসব প্রমাণপত্র দিয়ে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করা যাবে।
◾ বিয়ের কাবিননামা।
◾ অফিস প্রধানের প্রত্যয়নপত্র।
◾ ওয়ারিশ সার্টিফিকে।
◾ ভাই-বোনের জাতীয় পরিচয় পত্র।
◾ সন্তানের জাতীয় পরিচয় পত্র ও দেয়া যাবে।
অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র NID ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদনের নিয়ম।
জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন সম্পন্ন করার জন্য, আপনাকে ৬ টি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। নিচে প্রতিটি ধাপ বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
প্রথম ধাপঃ
আবেদনের পূর্বে ডকুমেন্ট তৈরি করে রাখা।
অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র NID ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের আবেদন করার পূর্বে, সংশোধনের ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে অথবা পরিষ্কার আলোতে ছবি তুলে কম্পিউটারের একটি নির্দিষ্ট ফোল্ডারে সংরক্ষণ করুন।
দ্বিতীয় ধাপঃ
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন।
ওয়েব সাইটে রেজিস্ট্রেশন করার পূর্বে গুগল প্লে স্টোর (Google Play Store) থেকে এনআইডি ওয়ালেট (NID Wallet) নামে একটি অ্যাপস আপনার মোবাইলে ইন্সটল করে নিন। এই অ্যাপস টি আপনার ফেস ভেরিফিকেশন করতে কাজে লাগবে।
এবার NID জাতীয় পরিচয় পত্র, ভোটার আইডি সংশোধন আবেদনের জন্য সরকারই এই https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর নিচের ছবির মত এরকম একটি ইন্টারফেস আপনার কম্পিউটার স্ক্রিনে দেখতে পাবেন।
স্কিনে দুইটি বক্সের ভিতরে দুটি অপশন দেখা যাবে। বাপাশের প্রথম যে অপশনটির উপরে লেখা অ্যাকাউন্ট নেই এবং নিচে লেখা রেজিস্টার করুন। যারা জাতীয় পরিচয় পত্র, ভোটার আইডি সংশোধন করবেন, তারা রেজিস্টার করুন এই অপশনে ক্লিক করতে হবে।
রেজিস্টার করুন অপশনে ক্লিক করার পর নিচের ছবির মত আপনার কম্পিউটার স্ক্রিনে এরকম একটি ছবি আসবে।
এখানে জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর অথবা ভোটার ফরম নম্বর, জন্ম তারিখ এবং ক্যাপচা কোড দিয়ে সাবমিট বাটনে ক্লিক করতে হবে।
(ভোটার ফরম নম্বর বলতে বোঝানো হয়েছে। আপনি যদি নতুন ভোটারের জন্য আবেদন করে থাকেন, আপনার ভোটার ফরম নম্বর দিয়ে এখানে রেজিস্ট্রেশন করে অনলাইন থেকে NID জাতীয় পরিচয় পত্র, ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করতে পারবেন।)
সাবমিট বাটনে ক্লিক করার পরে নিচে ছবির মতো এ রকম একটি ইন্টারফেস আপনার কম্পিউটার স্ক্রিনে আসবে।
এখানে আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ দুটি তথ্য দিতে হবে। একটি আপনার বর্তমান ঠিকানা অপরটি স্থায়ী ঠিকানা আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী এবং অস্থায়ী ঠিকানা যেটা আছে সেটি এখানে দিতে হবে। যদি ঠিকানা ভুল হয় সে ক্ষেত্রে আপনার রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে যাবে,এবং কিছু সময়ের জন্য ব্লক করে দেওয়া হবে। তাই বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা ড্রপডাউন বক্স থেকে সঠিক ভাবে নির্বাচন করে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
পরবর্তী বাটনে ক্লিক করার পর নিচের ছবির মত আরেকটি পেজ আপনার সামনে ওপেন হবে।
এখানে আপনার একটি সচল মোবাইল নাম্বার চাওয়া হবে। আপনাকে এখানে একটি সচল মোবাইল নাম্বার দিতে হবে। সচল মোবাইল নাম্বার দিতে হবে, কারণ আপনার এই নাম্বারে একটি এসএমএস এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন থেকে একটি কোড আসবে। যে কোডটি আপনাকে পরবর্তীতে পেজে লিখে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে।
মোবাইল নাম্বারটি লেখা সম্পন্ন হলে বার্তা পাঠানো অপশনে ক্লিক করুন। বার্তা পাঠান অপশনে ক্লিক করার পর নিচের ছবির মত এরকম একটি ইন্টারফেস আপনার সামনে আসবে।
এখানে আপনার মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে পাঠানো ৬ ডিজিটের ভেরিফিকেশন কোডটি বসিয়ে “বহাল” বাটনে ক্লিক করুন।
“বহাল” বাটনে ক্লিক করার পরে ফেস ভেরিফিকেশনের জন্য একটি বারকোড QR Code আপনার কম্পিউটার স্ক্রিনে আসবে।
বারকোড বা কিউআর কোডটি স্ক্যান করার জন্য আপনার মোবাইলে গুগল প্লে স্টোর থেকে ইন্সটল করা NID Wallet এনআইডি ওয়ালেট অ্যাপ টি ওপেন করুন।
NID wallet এনআইডি ওয়ালেট ওপেন করার পরে আপনার সামনে face verification ফেস ভেরিফিকেশন অপশনটি আসবে। start face scan স্টার্ট ফেস স্ক্যান লেখা এই অপশনে ক্লিক করে ফেস ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া শুরু করুন।
প্রথমে একটি সোজাসুজি ছবি তুলবেন। যদি ছবি তোলার প্রক্রিয়ার সঠিক হয়, তাহলে স্কিনে ok ওকে লেখা অথবা টিকমার্ক দেখতে পাবেন। তারপর চোখ ক্যামেরার দিকে রেখে মাথা একটু বামে এবং একটু ডানে ঘুরাবেন। একই ভাবে যদি ছবি তোলার প্রক্রিয়ার সঠিক হয়, তাহলে স্কিনে ok ওকে লেখা অথবা টিকমার্ক দেখতে পাবেন।
ফেস ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আপনার কম্পিউটার স্ক্রিনে নিচের ছবির মত এরকম একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন।
এখানে আপনার অ্যাকাউন্টের জন্য একটি পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। ভবিষ্যতে ফেস ভেরিফিকেশন ছাড়া অ্যাকাউন্ট লগইন করার জন্য সেট পাসওয়ার্ড অপশনে ক্লিক করুন। পাসওয়ার্ড না দিতে চাইলে বেরিয়ে যান অপশনে ক্লিক করুন। তবে বেরিয়ে না গিয়ে একটি পাসওয়ার্ড তৈরি কোরে নেওয়া খুবই ভালো। কারণ, ভবিষ্যতে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য যাচাই, ডাউনলোডের জন্য আপনাকে এই আইডি লগইন করতে পাসওয়ার্ড প্রয়োজন পড়বে। তাই পাসওয়ার্ড সেট করা ভালো।
এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ভোটার স্থানান্তরের সহজ প্রক্রিয়া।
ভোটার স্থানান্তর বর্তমানে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, কর্মব্যস্ত আমাদের এই জীবনে, কাজের প্রয়োজনে আমরা একই স্থানে স্থায়ীভাবে থাকতে পারিনা। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকায় বিচরণ করতে হয়। কিভাবে সহজে আপনি এক লেখা থেকে অন্য এলাকায় ভোটার স্থানান্তর করবেন আমরা সে বিষয়ে নিচে আলোচনা করবো।
তৃতীয় ধাপঃ
তথ্য সংশোধন
এবার শুরু হবে আপনার মূল কাজ। ভোটার আইডি কার্ড জাতীয় পরিচয় পত্রের ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য এতক্ষণ আপনি জাতীয় পরিচয় পত্রের ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট ওপেন করে যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে করেছেন। আপনার তথ্য সংশোধন এর মূল কাজ এখন থেকে শুরু হবে। আপনার অ্যাকাউন্ট সম্পন্ন হওয়ার পর, পুনরায় NID এনআইডি একাউন্ট লগইন করবেন . লগইন সম্পন্ন হওয়ার পরে নিচের ছবির মত এরকম একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন।
এই পেজে তিন ধরনের তথ্য সংশোধন করতে পারবেন।
১। ব্যক্তিগত তথ্য
আপনার ব্যক্তিগত তথ্য থেকে যা যা সংশোধন করতে পারবেন।
◾ নাম (বাংলা) ◾ নাম (ইংরেজি) ◾ লিঙ্গ
◾ রক্তের গ্রুপ ◾ জন্ম নিবন্ধন নম্বর ◾ জন্ম তারিখ
◾ জন্মস্থান
◾ পিতার তথ্য
◾ পিতার নাম (বাংলা) ◾ পিতার এনআইডি ◾ মৃত্যুর সন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
◾ মাতার তথ্য
◾ মাতার নাম (বাংলা) ◾ মাতার এনআইডি ◾ মৃত্যুর সন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
◾ স্বামী/স্ত্রীর তথ্য
◾ বৈবাহিক অবস্থা
◾ স্বামী/স্ত্রীর নাম (বাংলা) ◾ স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি ◾ মৃত্যুর সন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
২। অন্যান্য তথ্য
জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন এই পেজের অন্যান্য তথ্যের মধ্যে রয়েছে।
◾ শিক্ষাগত যোগ্যতা ◾ পেশা ◾টিন নাম্বার ◾ ড্রাইভিং লাইসেন্স নাম্বার
◾ পাসপোর্ট নাম্বার ◾ ধর্ম ◾ মোবাইল নাম্বার
৩। ঠিকানা
জাতীয় পরিচয় পত্র এন আই ডি ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করা যায় না। ভোটার আইডি কার্ড জাতীয় পরিচয় পত্রের ঠিকানা পরিবর্তন করার জন্য। ঠিকানা পরিবর্তন নামে একটি ফরম সংগ্রহ করে। উক্ত ফরমটি পূরণ করে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশন অফিসে জমা দিতে হবে।
আসুন এবার তথ্য সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু করা যাক।
ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন
জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ড কার্ড এর জন্ম তারিখ সংশোধন করার জন্য একাধিক প্রমাণপত্র সাবমিট করতে পারবেন। যেমন এসএসসি সার্টিফিকেট (SSC Certificate) পাসপোর্ট Passport ড্রাইভিং লাইসেন্স Driving License সার্ভিস বুক Service Book অথবা এমপিও শীট MPO Sheet এর কপি দিয়ে জন্ম তারিখ সংশোধন করা যাবে। কিন্তু এর মধ্যে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য প্রমাণপত্র হচ্ছে এসএসসি এবং ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধনের কপি।
ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন প্রক্রিয়া
ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধন করার জন্য পেজের উপরে ডানদিকে লাল রংয়ের বক্স করা এডিট বাটনে ক্লিক করুন। এডিট বাটনে ক্লিক করার পর নিচের ছবির মত এরকম আরেকটি নতুন পেজ ওপেন হবে।
এই পেজে তথ্য সংশোধন করার জন্য পুনরায় লিখতে পারবেন। আপনি যে তথ্যটি সংশোধন করবেন। যেমন – আপনি যদি আপনার বাংলা নাম সংশোধন করতে চান, তাহলে ‘নাম বাংলা’ লেখার বামপাশে ছোট একটি খালি বক্স দেখতে পাবেন। এই বক্সটি প্রথমে সিলেক্ট করে তারপরে নিচে আপনার সংশোধিত নামটি টাইপ করতে হবে। তদ্রুপ ভাবে ইংরেজি নাম, ঠিকানা, পিতার নাম, মাতার নাম, সংশোধন করার আগে বাম পাশের ছোট খালি বক্স টিক মার্ক দিয়ে তারপরে নিচের বক্সে টাইপ করে করতে হবে। এই পেজে আপনার সবকিছু সংশোধন সম্পন্ন হলে, পরবর্তী পেজে যাওয়ার জন্য উপরে ডানপাশে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
পরবর্তী বাটনে ক্লিক করার পরে এখানে নতুন একটি পেজ ওপেন হবে।এই পেজে এতক্ষণ আপনি যে তথ্যগুলো সংশোধন করেছেন সেগুলো পুনরায় দেখাবে।
এখানে বর্তমান এবং আপডেট দুটো তথ্যই দেখাবে। যদি আপনার তথ্য সংশোধন সঠিক হয়ে থাকে তাহলে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।আর যদি তথ্য ভুল হয়ে থাকে তাহলে পেছনে বাটনে ক্লিক করুন।পরবর্তী বাটনে ক্লিক করার পরে এবার ট্রানজেকশন প্রক্রিয়া। আপনাকে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি পরিশোধ করতে হবে।
চতুর্থ ধাপঃ
সংশোধন ফি প্রদান।
এখন আপনাকে ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য, সংশোধনের ধরন অনুযায়ী নির্দিষ্ট একটি ফি প্রদান করতে হবে। আপনি রকেট এবং বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে এই ফি প্রদান করতে পারবেন।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত টাকা লাগে?
এনআইডি কার্ড জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন ফি এর তালিকা
সংশোধনের ধরণ | সংশোধন ফি-এর পরিমাণ |
এনআইডির তথ্য সংশোধন | ২৩০ টাকা |
অন্যান্য তথ্য সংশোধন | ১১৫ টাকা |
দুই তথ্য সংশোধন | ৩৪৫ টাকা |
রিইস্যু | ৩৪৫ টাকা |
রিইস্যু জরুরী | ৫৭৫ টাকা |
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন এনআইডি পরিবর্তন ফি জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া।
সংশোধনের ধরন অনুযায়ী প্রতিটি নির্দিষ্ট ফি এর সাথে অতিরিক্ত ১৫% ভ্যাট প্রদান করতে হবে। যেমন আপনি যদি এন আই ডি তথ্য সংশোধন করতে চান, তাহলে এন আই ডি তথ্য সংশোধনের ফি ২০০ টাকার সাথে অতিরিক্ত ১৫% ভ্যাট অর্থাৎ ২৩০টাকা প্রদান করতে হবে। মোবাইল ব্যাংকিং খাতে অধিক ব্যবহৃত হয়ে থাকে ‘বিকাশ’। তাই আমরা এখানে বিকাশের মাধ্যমে ফি প্রদানের প্রক্রিয়াটি দেখাবো।
বিকাশের মাধ্যমে এনআইডি ফি প্রদানের নিয়ম।
বিকাশের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি জমা দেওয়ার জন্য আপনার স্মার্টফোনের বিকাশ অ্যাপস টি লগইন করে নিচের চারটি ধাপ অনুসরণ করুন।
প্রথমে > পে বিল অপশনে যান > এরপর > সরকারী ফি অপশনে ক্লিক করে > NID Service অপশনটি বাছাই করুন। এরপর > আপনার এনআইডি নম্বরটি ইংরেজিতে লিখুন। এরপর > আপনার আবেদনের ধরণ বাছাই করুন (আপনি যেই তথ্যটি সংশোধন করেছেন নির্দিষ্ট সেই তথ্যটি বাছাই করুন) নিচের ছবিতে দেখে আরো ভালোভাবে বুঝে নিন।
বিকাশের পিন নাম্বার দিয়ে আপনার এনআইডি ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন ফি প্রধান শেষ হওয়ার পর এখন আপনাকে পঞ্চম ধাপের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
মৃত্যু নিবন্ধন সনদ কি? অনলাইনে ৫ মিনিটে মৃত্যু নিবন্ধন সনদ করার নিয়ম।
একজন সচেতন নাগরিকের জন্ম নিবন্ধন সনদ থাকাটা যেমন জরুরী, তেমনি ভাবে বাংলাদেশের একজন নাগরিকের জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন আইন অনুযায়ী মৃত্যু মৃত্যুর পর দ্রুত সম্ভব মৃত্যু নিবন্ধন করাটাও জরুরী।
পঞ্চম ধাপঃ
প্রমাণপত্র ডকুমেন্ট আপলোড সম্পন্ন করন।
লেখার শুরুতে ‘প্রথম ধাপে’ আমরা বলেছিলাম ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য আপনার প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র কম্পিউটারে স্ক্যান করে একটি ফোল্ডারে সংরক্ষণ করুন। এবার আপনার সেই ফোল্ডার থেকে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র আপলোড করে ছবিতে দেখানো ড্রপডাউন মেনু থেকে আপনি ভোটার আইডি সংশোধনের জন্য যে সকল কাগজপত্র আপলোড করেছেন তা নির্বাচন করে দিন। নির্বাচন করার পরে ডানপাশে আপলোড বাটনে ক্লিক করুন।সকল কাগজপত্র আপলোড সম্পন্ন হওয়ার পরে উপরের ডান দিকে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
ষষ্ঠ ধাপঃ
এনআইডি সংশোধন আবেদন নিশ্চিত করুন
আবেদন নিশ্চিতকরন এটি সর্বশেষ ধাপ। এখানে আপনি এতক্ষণ জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ডের যেসব তথ্য সংশোধন করেছেন তা দেখানো হবে। এবং তথ্য সংশোধনের উপযুক্ত প্রমাণ স্বরূপ যে সকল কাগজপত্র সাবমিট করেছেন সেগুলো দেখানো হবে। আপনি ভালভাবে মিলিয়ে নিবেন, আপনার তথ্যগুলো সঠিক আছে কিনা এবং যে সকল কাগজপত্র সাবমিট করেছেন সেগুলো যথাযথ কিনা।যদি সব তথ্য সঠিক থাকে তাহলে উপরের ডান পাশে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।সাবমিট বাটনে ক্লিক করার সাথে সাথে জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের আবেদন সম্পন্ন হয়ে গেলো। কিছুদিনের মধ্যেই আপনার প্রোফাইলে আবেদনটির সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
সংশোধিত ভোটার আইডি কার্ড অনলাইন কপি ডাউনলোড করুন।
ভোটার আইডি কার্ডের অনলাইন কপি ডাউনলোড
সংশোধিত এনআইডি কার্ড জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ডের অনলাইন কপি ডাউনলোড করার জন্য আপনার প্রফাইলে ফিরে আসুন।প্রোফাইলে উপরের দিকে ডাউনলোড করার অপশন পাবেন। এখানে সংশোধিত আইডি কার্ডের উভয় পিঠ পিডিএফ ফরমেট আকারে ডাউনলোড করতে পারবেন। ডাউনলোড করে এটি প্রিন্ট করে নিন। সংশোধিত মূল জাতীয় পরিচয় পত্র এন আই ডি কার্ড হাতে পাওয়ার আগে এটি দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।
সর্বশেষ
উপরোক্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনি খুব সহজে অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে পারবেন। এরপরেও জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন প্রক্রিয়ায় কিছুটা জটিলতা দেখা দিতে পারে। জাতীয় পরিচয় পত্র এনআইডি কার্ড ভোটার আইডি কার্ড থেকে আপনি যে তথ্যটি সংশোধন করতে চাচ্ছেন যদি ওই তথ্যের সঠিক প্রমাণপত্র আপনার কাছে না থাকে। তাহলে প্রমানপত্র ছাড়া আপনি ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে পারবেন না।
এছাড়াও আপনি যেসকল প্রমাণপত্র সাবমিট করবেন যদি ওই প্রমানপত্রের সাথে আপনার তথ্যের হুবহু মিল না থাকে সেক্ষেত্রে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য সংশোধন করা যাবে না। উদাহরণস্বরূপ – আপনার ভোটার আইডি কার্ড, জাতীয় পরিচয় পত্র বা এনআইডি কার্ডে নাম আছে আব্দুর রহমান। আপনি এটি পরিবর্তন করে শুদ্ধভাবে মোহাম্মদ আবদুর রহমান লিখতে চাচ্ছেন।এক্ষেত্রে আপনি প্রমাণপত্র হিসেবে যে কাগজ সাবমিট করবেন সেটাতে অবশ্যই মোহাম্মদ আবদুর রহমান লেখা থাকতে হবে। তা না হলে জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ডের নাম সংশোধন করা যাবে না।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
ভোটার আইডি কার্ড নাম সংশোধন করতে কি কি লাগে?
ভোটার আইডি কার্ডের নাম সংশোধনের জন্য একাধিক প্রমাণপত্র সাবমিট করতে পারবেন। যেমন এসএসসি সার্টিফিকেট (SSC Certificate) পাসপোর্ট Passport ড্রাইভিং লাইসেন্স Driving License সার্ভিস বুক Service Book এমপিও শীট MPO Sheet অথবা বিয়ের কাবিননামা দিয়ে ও ভোটার আইডি কার্ডের নাম সংশোধন করা যাবে।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কত দিন লাগে?
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য সাধারনত জাতীয় পরিচয় পত্র সার্ভার অফিস থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন সময় নির্ধারন করা হয়েছে। যদি অনলাইনে উপযুক্ত প্রমাণপত্র সঠিক ভাবে আপলোড করেতে পারেন, তাহলে আবেদন করার পর ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে আবেদন অনুমোদন হয়ে যায়।
NID এনআইডি কার্ড কতবার সংশোধন করা যায়?
জাতীয় পরিচয় পত্র, ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের নির্দিষ্ট কোন লিমিট দেওয়া হয়নি। ভোটার আইডি কার্ড জাতীয় পরিচয় পত্র একাধিক ভুল থাকলে আপনি যতবার ইচ্ছা সংশোধনের.. আবেদন করতে পারবেন। এক তথ্য শুধুমাত্র একবার সংশোধন করা যাবে। প্রথমবার সংশোধনের জন্য আবেদনে ফি ভ্যাটসহ ২৩০ টাকা, ২য়বার সংশোধনের জন্য আবেদন ফি ৩৪৫, ৩য় বার সংশোধনের জন্য আবেদন ফি থেকে যে কোন বার ৪৬০ টাকা পরিশোধন করতে হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে জিডি করা ছাড়া কি পুনরায় উত্তোলন করা সম্ভব?
জিডি করা ছাড়া কোন ভাবেই উত্তলন করা সম্ভব নয়। জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে সর্ব প্রথম কাজ হল থানায় জিডি করা।
এনআইডি কার্ডের তথ্য সংশোধন করা হলে আগের তথ্য কি সংরক্ষিত থাকে?
জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য যতবার সংশোধন করেন না কেন, সকল তথ্যই কেন্দ্রীয় সার্ভারে সংরক্ষিত থাকে।
উপযুক্ত প্রমান পত্র ছাড়া জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্ম তারিখ সংশোধনের নিয়ম কি?
এই ক্ষেত্রে একটি লিখিত আবেদন সংশ্লিষ্ট উপজেলা/জেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে জমা দিতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে কতৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্বেও ভুল করে এসএসসি বা তদুর্দ্ধ লিখেছি, এক্ষেত্রে কি করণীয়?
এই সমস্যার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এসএসসি পাশ করা হয়নি কিন্তু ভুল করে লিখেছিলাম মর্মে হলফনামা করতে হবে। এরপর ঐ কপি সহ সংশোধনের জন্য আবেদন করুন।
পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের এনআইডি কার্ডে পিতা/মাতার নাম বিভিন্নভাবে লেখা, এক্ষেত্রে কি করণীয়?
সকলের জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ডের কপি ও পিতা-মাতা ও সন্তানের সম্পর্কের বিবরণ দিয়ে এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং, উপজেলা/জেলা নির্বাচন অফিস বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদনের পর বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হবে। উক্ত তথ্যের মিল পাওয়া গেলে আবেদন মঞ্জুর করা হবে।