একজন সচেতন নাগরিকের জন্ম নিবন্ধন সনদ থাকাটা যেমন জরুরী, তেমনি ভাবে বাংলাদেশের একজন নাগরিকের জন্ম মৃত্যু নিবন্ধন আইন অনুযায়ী মৃত্যু মৃত্যুর পর দ্রুত সম্ভব মৃত্যু নিবন্ধন করাটাও জরুরী।
সহজে মৃত্যু নিবন্ধন কিভাবে করব?
জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করার পূর্বে একজন নাগরিক তার নিজের যাবতীয় তথ্য নিজেই প্রধান করে জন্ম সনদ তৈরি করতে পারেন।কিন্তু মৃত্যু নিবন্ধন তৈরি করার জন্য যাবতীয় তথ্য প্রদান এবং তদারকির সমস্ত কাজ গুলি করতে হয় অন্য কাউকে। এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়। নির্ভুলভাবে একটি মৃত্যু নিবন্ধন কত সহজে করবেন কয়েকটি ধাপে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করছি।
মৃত্যু নিবন্ধন করার জন্য কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন?
মৃত্যু নিবন্ধন তৈরি করতে গিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বের পড়ে যান, দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ার আর দরকার নেই। নিম্নোক্ত কাগজপত্র গুলো সঙ্গে নিয়ে আপনি খুব সহজেই মৃত্যু নিবন্ধন করতে পারবেন।
◾ মৃত্যু নিবন্ধন তৈরি করার জন্য ডিজিটাল কিংবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র লাগবে।
◾ মৃত্যুর সঠিক তারিখ
◾ মৃত্যু সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় সঠিক প্রমাণাদি লাগবে।
◾ মৃত ব্যাক্তির মৃত্যুকালীন সময়ের স্থায়ী এবং এবং অস্থায়ী ঠিকানা।
◾ মৃত ব্যাক্তির বর্তমান সঠিক ঠিকানা।
◾ মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য যিনি আবেদন করতে এসেছেন তার জন্ম নিবন্ধন নাম্বার কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার।
◾ যিনি প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে এসেছেন তার জন্ম নিবন্ধন নাম্বার কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার। (এক্ষেত্রে আবেদনকারীর তথ্য দিলেও চলবে।)
মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য মৃত্যু ব্যক্তির প্রয়োজনীয় প্রমাণাদির তালিকা।
মৃত্যু নিবন্ধন এর জন্য মৃত ব্যক্তির মৃত্যু সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় প্রমাণাদির জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র দেখাতে হবে।
যেমন –
১। মৃত ব্যক্তির জানাজা পড়ানো ইমাম অথবা সৎকারের সাথে জড়িত পুরোহিতের নিকট থেকে একটি প্রত্যায়ন পত্র সংগ্রহ করতে হবে।
২। যদি মৃত্যু অস্বাভাবিক হয়ে থাক, সে ক্ষেত্রে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র সত্যায়িত অনুলিপি দেখাতে হবে।
৩। কবরস্থানে দাফন অথবা সৎকারের অনুমতি সম্পর্কিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রদত্ত রশিদ বা কাগজের ফটোকপি সাথে নিতে হবে।
৪। মৃত ব্যক্তির মৃত্যু সম্পর্কিত একটি প্রত্যায়ন পত্র। এটি ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা অথবা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হবে। যদি মৃত ব্যক্তি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অধীন হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার দ্বারা প্রদানকৃত একটি প্রত্যয়ন পত্র হতে হবে।
এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ভোটার স্থানান্তরের সহজ প্রক্রিয়া।
মৃত্যু নিবন্ধন করার জন্য ফি কত টাকা?
সরকারি বিভিন্ন সনদ তৈরি করার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ফি দিতে হয়। তবে মৃত্যু নিবন্ধন তৈরি করার জন্য, যদি সেটি মৃত্যুর ৪৫ দিনের ভিতরে হয়, তাহলে কোন ধরনের ফি প্রদান করতে হয় ন। মৃত্যুর ৪৫ দিনের পর থেকে ৫ বছরের মধ্যে মৃত্যু নিবন্ধন তৈরি করার জন্য ২৫ টাকা সরকারি ফি দিতে হবে। মৃত্যুর পাঁচ বছর পর, মৃত্যু নিবন্ধন সনদ তৈরি করার জন্য খরচ হবে সরকারি ফি বাবদ ৫০ টাকা।
ঘরে বসে অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধনের আবেদনের নিয়ম।
অনলাইনে মৃত্যু নিবন্ধন আবেদন করার জন্য এই লিংকে https://bdris.gov.bd/dr/application প্রবেশ করুন।এই ওয়েবসাইট ওপেন হওয়ার পরে মৃত্যু নিবন্ধন অনলাইনে আবেদন করার জন্য ৬ টি ধাপ সম্পন্ন করতে হবে। প্রথমে আপনার সামনে যে পেজটি ওপেন হবে, এই পেজে মৃত ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন নাম্বার এবং জন্ম তারিখ দিয়ে অনুসন্ধান করুন।
অনুসন্ধান বাটনে ক্লিক করার পরে আপনার সামনে একটি পেজ ওপেন হবে।
এটি দ্বিতীয় ধাপঃ
এখানে জন্মতারিখ, নাম, বাবার নাম, মাতার নাম দেখাবে। যদি তথ্যটি সঠিক হয় তাহলে ডানপাশের নির্বাচন করুন বাটনে ক্লিক করুন।
নির্বাচন করুন বাটনে ক্লিক করার পরে নতুন মৃত্যু নিবন্ধন আবেদনের জন্য নতুন একটি পেজ ওপেন হবে।
এটি তৃতীয় ধাপঃ
এখানে
◾ দেশ
◾ বিভাগ
◾ জেলা
◾ সিটি কর্পোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট/ উপজেলা
◾পৌরসভা/ইউনিয়ন
◾অফিস
ড্রপডাউন থেকে নির্বাচন করে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।
পরবর্তীতে এ ক্লিক করার পরে নতুন একটি পেজ ওপেন হবে।
এটি চতুর্থ ধাপঃ
মৃত্যু নিবন্ধন আবেদনের জন্য মৃত ব্যক্তির তথ্য প্রদান।
◾ মৃত্যুর তারিখ।
◾ মৃত্যুর কারণ ড্রপডাউন থেকে সিলেক্ট করতে হবে।
◾ স্বামী বা স্ত্রীর জন্ম নিবন্ধন নাম্বার।
◾ স্বামী বা স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর।
◾ স্বামী বা স্ত্রীর নাম বাংলায়।
◾ স্বামী বা স্ত্রীর নাম ইংরেজিতে।
(তবে স্বামী বা স্ত্রীর জন্ম নিবন্ধন নম্বর, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর, নাম বাংলা, নাম ইংরেজিতে না দিয়েও পরবর্তীতে ক্লিক করতে পারেন।)
পরবর্তীতে এ ক্লিক করার পরে যে পেজ ওপেন হবে।
এটি পঞ্চম ধাপঃ
মৃত্যু নিবন্ধন আবেদনের জন্য মৃত ব্যক্তির মৃত্যু স্থান ও বসবাসের স্থান এর তথ্য প্রদান।
এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে হবে।
১। মৃত্যুর স্থানের বিবরণ।
২। মৃত্যুর সময় বসবাসের ঠিকানা।
ঠিকানা গুলো সঠিক ভাবে দেওয়া হলে পরবর্তীতে ক্লিক করুন।
পরবর্তী পেজে ক্লিক করার পরে নতুন যে পেজ ওপেন হবে এই পেজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এটি ষষ্ঠ ধাপঃ
মৃত্যুনিবন্ধন আবেদনকারীর তথ্য প্রদান
এই পেজে নতুন মৃত্যু নিবন্ধনের আবেদনের জন্য যিনি আবেদন করছেন, আবেদনকারী তথ্য, তথ্য প্রদানকারীর যাবতীয় তথ্য এখানে দিতে হবে। (আবেদনকারী এবং তথ্য প্রদানকারীর তথ্য একই হবে) আবেদনকারী এবং তথ্য প্রদানকারীর সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করার পরে, নিচে সংযোজন বাটনে, মৃত ব্যক্তির জানাজা যে ইমাম পড়িয়েছেন, সৎকার যে পুরোহিত করেছেন তার প্রত্যায়ন পত্র। হাসপাতাল কর্তৃক মৃত্যু সনদ।
অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে ময়নাতদন্তের যাবতীয় কাগজপত্র। মৃত্যু সম্পর্কিত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর থেকে একটি প্রত্যয়ন পত্র। সকল কাগজপত্র সত্যায়িত কপি সংযোজন বাটনে এক এক করে আপলোড করে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করতে হবে।
পরবর্তী বাটনে ক্লিক করার পর যে পেজটি ওপেন হবে এই পেজে আপনি এতক্ষণ যে তথ্যগুলো দিয়েছেন সব তথ্য গুলো দেখাবে।
সর্বশেষ ধাপ
মৃত্যু নিবন্ধন আবেদনের তথ্য যাচাই করে আবেদন সম্পন্ন করুন।
তথ্যগুলো ভালো করে পরীক্ষা করে দেখুন সঠিক আছে কিনা। কারণ তথ্যভুল দিলে সনদ বেরিয়ে যাওয়ার পরে সংশোধন করতে যথেষ্ট পরিমাণে ঝামেলা আছে। তথ্যগুলো সঠিক থাকলে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে এবার আবেদন সম্পন্ন করুন। সাবমিট বাটনে ক্লিক করার পরে আবেদন সম্পন্ন হয়ে যাব।
আবেদন সম্পন্ন হওয়ার পরে একটি পেজ ওপেন হবে এই পেজে একটি আবেদন নাম্বার উল্লেখ থাকবে। আবেদন নাম্বারটি সংরক্ষণ করু। এই পেজটি Save as বাটনে ক্লিক করে ডাউনলোড করে নিন। অথবা প্রিন্ট করে নিন।
মৃত্যু নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ
আবেদন কপিটি স্থানীয় সরকার বিভাগ এর ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনের জমা প্রদান করুন। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পরে তারা এই আবেদনের প্রেক্ষিতে মৃত্যু নিবন্ধন সনদ দ্রুত তৈরি করে আপনাকে সরবরাহ করবে।
মৃত্যু নিবন্ধন সনদের জন্য জন্ম নিবন্ধন জরুরী?
মৃত্যু নিবন্ধন সনদের জন্য মনে রাখবেন, মৃত ব্যক্তির অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা মুদ্রিত জন্ম নিবন্ধন সনদ যদি না থাকে সে ক্ষেত্রে মৃত্যু নিবন্ধন সনদের জন্য আবেদন করা যাবে না। মৃত ব্যক্তির মৃত্যু নিবন্ধন সনদের জন্য মৃত্যুর ৪৫ দিনের ভিতর আবেদন করে নেওয়াই ভালো। যদি কোন কারণে মৃত ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকে সে ক্ষেত্রে মৃত্যু নিবন্ধন সনদের আবেদন এর পাশাপাশি জন্ম নিবন্ধন সনদের আবেদন করতে পারবেন এ জন্য বাড়তি কোনো ফি প্রয়োজন নেই।
মৃত্যু নিবন্ধন সনদের প্রয়োজনীয়তা
ওয়ারিশ হিসেবে কোন সম্পত্তির মালিকানার জন্য মৃত্যু নিবন্ধন সনদের প্রয়োজন। বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের জন্য মৃত্যু নিবন্ধন সনদের প্রয়োজন। এছাড়াও আরো অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদের প্রয়োজন। তাই মৃতর ৪৫দিনের ভিতরে মৃত ব্যক্তির মৃত্যু নিবন্ধন সনদ করে ফেলা ভাল।
মৃত্যু নিবন্ধন: যেসব কাজে এটি দরকার হয়