ডোপ টেস্ট কি? সরকারি চাকুরিতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক? ডোপ টেস্ট কি? সরকারি চাকুরিতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক? dope test

ডোপ টেস্ট বর্তমানে বাংলাদেশ সহ পুরো বিশ্বে মাদকাসক্তির প্রকোপ মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদক একটি রাষ্ট্র, একটি সমাজ, এবং একটি পরিবারের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। অতিরিক্ত মাদকাসক্তির ফলে মাদকাসক্ত ব্যক্তির কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং সে সমাজে বোঝায় পরিণত হয়। তাই বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মত বাংলাদেশ সরকারও বেশ কিছুদিন ধরে বেশকিছু শ্রেণি-পেশার মানুষের উপর, ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার কথা ভাবছে। ডোপ টেস্ট এর ফলে মাদকাসক্তি ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে তাকে শাস্তির আওতায় আনা যাবে। সরকারি চাকরিতে যোগদানের পূর্বে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক কিনা এবং ডোপ টেস্ট কি, কাদের কে এই ডোপ টেস্ট করানো হবে এবং কোন কোন মাদক ডোপ টেস্টে ধরা পড়ে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। 

শুরুতেই জেনে নেই ডোপ টেস্ট কি? 

ডোপ টেস্ট বা ড্রাগ টেস্ট হলো কোন প্রাণীর শরীরে কোন অংশের নমুনা থেকে শরীরে নির্দিষ্ট কোন মাদকের উপস্থিতি আছে কিনা তা পরীক্ষা করা। 

আমাদের দেশে ডোপ টেস্ট কাদের উপর বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে?? 


বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ডোপ টেস্ট করার নিয়ম চালু করা হচ্ছে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন বলেছেন, সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়ার আগে সব প্রার্থীরই স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় ডোপ টেস্ট করা হবে। জীবনে কেউ যদি ইয়াবা, গাঁজা ও হেরোইনের মতো মাদক সেবন করে থাকে-সে চাকরি পাবে না। কারণ ডোপ টেস্টে সেটা ধরা পড়বে। ডোপ টেস্ট এর জন্য আমাদের দেশের ডিএনসি (Department of Narcotics Control) ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে খসড়া প্রণয়ন করে ফেলেছে এখন এটি শুধু বাস্তবায়নের পালা। ডিএনসি এর খসড়ায় উল্লেখিত নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন চাকরি ও অন্যান্য নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট এর ফলাফল গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হবে।


এগুলো হচ্ছে:

চাকরিক্ষেত্রে: সরকারি, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত, স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি সকল চাকরিতে প্রবেশের জন্য মেডিকেল সার্টিফিকেটের পাশাপাশি ডোপ টেস্টের সার্টিফিকেট প্রদর্শন করতে হবে। এছাড়াও এসকল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চাকরিজীবীদেরও যেকোনো সময় সন্দেহের কারণে ডোপ টেস্ট করানোর নির্দেশ দেয়া হতে পারে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য: ড্রাইভিং লাইসেন্স করার বা নবায়ন করার সময় মেডিকেল সার্টিফিকেট এর পাশাপাশি ডোপ টেস্ট নেগেটিভ এর সার্টিফিকেট ও প্রয়োজন হবে।

শিক্ষাক্ষেত্রে: বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্যও ডোপ টেস্ট ফলাফল পরীক্ষার পরিকল্পনা করা 4 হচ্ছে।

বিদেশ ভ্রমণে: বাংলাদেশ থেকে কাজের জন্য বা শিক্ষার উদ্দেশ্য অন্য কোন দেশে যেতে হলে ডোপ টেস্ট এর ফলাফল প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক করা হবে।

অস্ত্রের লাইসেন্স করতে: অনেকেই ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কারণে অস্ত্র লাইসেন্স করিয়ে নিজের কাছে রাখে। অস্ত্র ভুল মানুষের হাতে পরলে তা বিপজ্জনক হতে পারে। সেকারণে অস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়ার জন্য ডোপ টেস্ট করার নিয়ম চালু করা হবে।

ডোপ টেস্ট এর জন্য শরীর থেকে কি কি নমুনা সংগ্রহ করা হয়? 

মাদক গ্রহণের ফলে মাদকাসক্ত ব্যক্তি অথবা প্রাণীর শরীরে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করে। তাই মানুষ অথবা কোন প্রাণীর দেহের কিছু নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করেই রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি শনাক্ত করে, মানবদেহে বা প্রাণীর শরীরে নির্দিষ্ট কি ধরনের মাদক আছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়। ডোপ টেস্ট এর জন্য নমুনা হিসেবে সাধারণত মুত্র, রক্ত, মুখের লালা, চুল, ঘাম ও শ্বাস-প্রশ্বাসের বাতাস ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

কোন রোগের জন্য কি ধরনের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাবেন। 

কোন ধরনের মাদকের উপস্থিতি শনাক্তের জন্য ডোপ টেস্ট করানো হবে? 

বাংলাদেশে ডিএনসি (Department of Narcotics Control) এর প্রণীত খসড়া অনুযায়ী ডোপ টেস্টে নির্দিষ্ট কিছু ড্রাগ পরীক্ষা করা হবে। এসকল ড্রাগ এর রাসায়নিক উপাদান কারো দেহে পাওয়া গেলে তার ডোপ টেস্টের ফলাফল পজিটিভ আসতে পারে। 

ড্রাগগুলোর তালিকা দেয়া হলোঃ

১। অপিও ইডস (Opioids): এই ধরনের মাদকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হেরোইন, মরফিন, কডেইন।

২। মেথামফেটামিন (Methamphetamine): এটি মূলত ইয়াবা-এর মূল উপাদান। মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইন মিশ্রিত করে ইয়াবা তৈরী করা হয়।

৩। ক্যানাবিওনিডস (Cannabinoids): এধরণের মাদকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গাঁজা বা মারিজুয়ানা, ক্যান্নাবিস, হাশিস।

৪। বেনজোডায়াজেপাইনস (Benzodiazepines): এর মাঝে উল্লেখযোগ্য মাদক হচ্ছে ডায়াজেপাম, ক্লোনাজেপাম, মিডাজোলাম।

৫। অ্যালকোহল: ডোপ টেস্টে ইথাইল অ্যালকোহল পরীক্ষার মাধ্যমে সকল প্রকার মদ ও মদজাতীয় পদার্থ সনাক্ত করা হবে।


৬। হ্যালুসিনোজেন : এলএসডি, কেটামিন, মেসকালিন।

 ৭। সিগারেট: সিগারেটের নিকোটিন কে ডোপ টেস্ট হিসাব করা হয় না। তাই সিগারেট খেলে ডোপ টেস্ট পজিটিভ আসবে না। (সিগারেট খেলে কি ডোপ টেস্ট পজিটিভ আসবে? উত্তর – না)

মাদক গ্রহণের পর শরীরে মাদকের রাসায়নিক অস্তিত্ব কতদিন স্থায়িত্ব থাকে ?


মাদকের শ্রেণী
মাদকের নামমূত্রচুলরক্তলালা 

ক্যানাবিওনিডস
মারিজুয়ানা৩০ দিন৯০ দিন৪ ঘন্টা৭২ ঘন্টা
কৃত্রিম মারিজুয়ানা৭২ ঘন্টা৯০ দিন৪৮ ঘন্টা৪৮ ঘন্টা






অপিওইড
মরফিন৩ দিন৯০ দিন৩ দিন৩ দিন
কোডিন৩ দিন৯০ দিন২৪ ঘন্টা৪ দিন
হেরোইন৩ দিন৯০ দিন৬ ঘন্টা১ ঘন্টা
হাইড্রোকডোন৪ দিন৯০ দিন২৪ ঘন্টা৩৬ ঘন্টা
মেথাডোন১২ দিন১০ দিন৯০ দিন২৪ ঘন্টা
অক্সিকডোন৪ দিন৯০ দিন২৪ ঘণ্টা৪ দিন
ট্রামাডল৭২ ঘন্টা৯০ দিন৪৮ ঘন্টা৪৮ ঘন্টা


বেঞ্জোডিয়াজেপাইন
ডায়াজেপাম৬ সপ্তাহ৯০ দিন৪৮ ঘন্টা১০ দিন
আলপ্রেজোলাম৪ দিন৯০ দিন২৪ ঘন্টা২ দিন
লোরাজেপাম৬ দিন৩০ দিন৩ দিন৮ ঘন্টা
টেমাজে পাম৬ সপ্তাহ৯০ দিন২৪ ঘন্টা২৪ ঘন্টা


হ্যালুসিনোজেন
এলএসডি৪ দিন৯০ দিন২ ঘন্টা———
পিসিপি৪ সপ্তাহ৯০ দিন২৪ ঘন্টা১০ দিন
কেটামিন১১ দিন৯০ দিন৪ দিন——–
মেসকালিন৩ দিন৯০ দিন২৪ ঘন্টা১০ দিন

অ্যামফেটামিন
মেথামফেটামিন১ সপ্তাহ৯০ দিন৩ দিন৪ দিন
অ্যামফেটামিন৭২ ঘন্টা৯০ দিন৪৬ ঘন্টা৫০ ঘন্টা
কোকেনকোকেন৩ দিন৯০ দিন২৪ ঘন্টা২ দিন
বারবিট্রেটসবারবিট্রেটস৬ সপ্তাহ৯০ দিন৭২ ঘন্টা৩ দিন
অ্যালকোহলইথাইল অ্যালকোহল৪৮ ঘন্টা৯০ দিন———৩ দিন

ডোপ টেস্টে পজিটিভ হলে কি হতে পারে?

কারো ডোপ টেস্টের ফলাফল যদি পজিটিভ আসে ঐ ব্যক্তিকে মাদকাসক্ত বলে ঘোষণা করা হবে। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বা স্থানীয় সরকারের কোন কর্মচারী যদি মাদকাসক্ত হিসেবে চিহ্নিত হয় তবে তার বিরুদ্ধে সরকারি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। সেক্ষেত্রে ঐ কর্মচারীকে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী অসদাচরণ ধারায় শান্তি দেয়া হবে।

কিভাবে ডোপ টেস্ট থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন। 

ডোপ টেস্টের পজিটিভ ফলাফল অনেক ক্ষেত্রেই অনেক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কখনো তার জন্য অনেক ক্যারিয়ার ও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এবিষয়টি এড়ানোর জন্য মাদক গ্রহণ বন্ধ করা সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। কেউ মাদকাসক্ত থাকলে ডোপ টেস্টের আগেই মাদক গ্রহণ বন্ধ করে দিতে হবে। উপরে দেয়া তালিকা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কোন মাদক গ্রহণ করে থাকলে ঐ মাদক শরীর থেকে চলে যাওয়ার পর ডোপ টেস্ট করাতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাদক গ্রহণ বন্ধের ৩ মাস বা তারও পরে ডোপ টেস্ট করানো উচিত। এতে ডোপ টেস্টের ফলাফল নেগেটিভ আসার অনেক বেশী সম্ভাবনা থাকবে।

মাদকের মতো অভিশাপ এর বিরুদ্ধে অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে ডোপ টেস্ট। মাদক একটি পরিবার, একটি সমাজ এমনকি একটি রাষ্ট্রকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। মাদক শুধু শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতিগ্রস্থ করে না, এটা অর্থনৈতিকভাবেও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত করে। রাষ্ট্রের অনেক অর্থ এই মাদকের জন্য বিদেশে পাচার হয়ে যায়। বাংলাদেশে ডোপ টেস্ট পুরোপুরিভাবে কার্যক্রম শুরু হলে এ দেশে মাদকের বিরুদ্ধে এটি শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি। আসুন, আমরা সবাই মাদককে না বলি এবং সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ি।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট
ডোপ টেস্টের ফলাফল

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *