মামলা করার সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি

অনেকেই নানান ভাবে প্রতারণা, হেনস্থা, নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন।  কিন্তু মামলা করার সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি না জানার কারণে কাঙ্খিত বিচার থেকে বঞ্চিত হন। আমাদের সমাজে অপরাধের সংখ্যা অনেক মাত্রায় বেরে গেছে এর কারণ বর্তমানে সমাজে অসাধু লোকের পরিমাণ অনেক বেশি। সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন জায়গার মানুষ নানা রকম জটিলতার সম্মুখীন হয়ে থাকেন এবং তারা বিচারের জন্য ছুটে যান থানা এবং আদালতে। প্রয়োজন হয় মামলা করার, তাই মামলা করার আগে জানতে হবে মামলা করার সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি। মামলা করার সঠিক নিয়ম পদ্ধতি না জেনে মামলা করলে সেই মামলার কাঙ্খিত বিচার থেকে বঞ্চিত হতে হয়।

 অনেকেই মামলা-মোকদ্দমা করেন এবং শেষপর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত বিচার না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেন। এটা অবশ্যই আইন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার জন্য।সাধারণ ডায়েরি বা জিডি থেকে শুরু করে মামলা করা এবং আদালত দ্বারস্থ হওয়ার প্রয়োজন হলে এই বিষয়ে আগে থেকে সঠিক কোনো ধারণা না থাকলে আইনগত জটিলতায় পড়তে হয়। অনেক সময় সঠিক সময়ে সঠিক আইন অনুযায়ী মামলা না করলে মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট হয়ে যায় পড়তে হয় জটিলতায়। তাই কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে আইনি সহায়তা নিবেন এবং কোনো সমস্যার জন্য কিভাবে মামলা করবেন এসকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

Table of Contents

সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করার নিয়ম। Rules of General Diary or GD

মামলা করার সঠিক নিয়ম
সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করার নিয়ম। General Diary or GD

কোন ঘটনার আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করার পূর্বে প্রাথমিক একটি বিষয় হলো সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করা। বিশেষ কোন ডকুমেন্ট বা মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে গেলে আইনগত রেকর্ড সংরক্ষণ বা পুলিশে কে প্রাথমিক তথ্য জানানোর জন্য সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করার প্রয়োজন হয়।

অনেক সময় কারো বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা না করে প্রথমে সাধারন ডায়েরি বা জিডি আকারে করা হয়। জিডি সবসময় যে এলাকায় ঘটনা সংঘটিতহয়েছে বা যে এলাকা থেকে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট বা মহামূল্যবান জিনিস হারিয়ে গেছে ওই এলাকার স্থানীয় থানায় করা হয়ে থাকে। যে এলাকায় হারিছে বা যে এলাকার ঘটনা সেই এলাকার থানাতে সাধারন ডায়েরি বা জিডি করতে হবে, অন্য কোন থানায় জিডি নিবে না।

সাধারন ডায়েরি বা জিডি সাদা কাগজে, বরাবর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্থানীয় থানার নাম, জিডির বিষয়: “সাধারণ ডায়রি প্রসঙ্গে” উল্লেখ কর,   ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ লিখে জিডির আবেদন করতে হয়। আবেদনকারী কে জিডিতে নিজেি নাম, মোবাইল নাম্বারসহ বিস্তারিত দিতে হবে।হারিয়ে যাওয়া ডকুমেন্ট বা মহামূল্যবান  জিনিসপত্রের ক্ষেত্রে যা হারিয়ে গেছে তার বিস্তারিত বর্ণনা থাকতে হবে। জাতীয় পরিচয় পত্র বা এনআইডি, আইডি কার্ড অথাবা কোন দলিল ইত্যাদি হারিয়ে গেলে সাধারণ ডায়েরি বা  জিডি করার ক্ষেত্রে এর একটি ফটোকপি আবেদনের সাথে সংযুক্ত করা লাগতে পারে। জিডির দুই দুইটি আবেদন নিয়ে থানায় গেলে জিডি নথিভুক্ত করে সেই নম্বর বসিয়ে একটি কপি আবেদনকারীকে দেওয়া হয়।

মামলা কি মামলা কত প্রকার?

মামলা হল কোন ঘটনার আইনে বিচার চাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু কর। সমস্যা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী মামলা কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন ক্রিমিনাল কেস বা ফৌজদারি মামলা ও দেওয়ানী মামলা। ক্রিমিনাল কেস বা ফৌজদারি মামলা ঘটনা যে স্থানে ঘটেছে ঐ স্থানীয় থানায় অথবা আদালত উভয় স্থানেই করা যায়। আপনার মামলা পরিচালনা করার জন্য একজন আইনজীবীর সহায়তা নেওয়া যেতে পারে, আর আপনি নিজেই যদি এ সম্পর্কে অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন তাহলে আদালতের অনুমতি নিয়ে নিজেই মামলা পরিচালনা করতে পারবেন।

জি আর মামলা কি? GR Case

জেনারেল রেজিস্টার মামলা, এটা কে সংক্ষেপে বলা হয় জি আর মামলা। থানায় এফআইআর আকারে যে সকল মামলা সাধারণ ভাবে রুজু করা হয়, ঐসকল মামলাকে জি আর বা জেনারেল রেজিস্টার মামলা বলে।

সিআর মামলা কি? CR Case

কমপ্লেইন রেজিস্টার মামলা এটা কে সংক্ষেপে বলা হয় সি আর মামলা বলে।যে সকল মামলা খানায় না করে সরাসরি আদালতে রুজু করা হয় এ সকল মামলাকে সিআর মামলা বলে।সিআর মামলা সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট  মামলার শুনানি করেন অথবা মামলা প্রত্যাহার করেন।

ফৌজদারি মামলা বা ক্রিমিনাল কেস কি? What is criminal case?

মামলা করার সঠিক নিয়ম
ফৌজদারী মামলা বা ক্রিমিনাল কেস

ক্রিমিনাল কেস বা ফৌজদারি মামলা হল – হত্যা, ধর্ষণ,অপহরণ,নির্যাতন,হুমকি, অগ্নিসংযোগ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদির মতো ঘটনাকে ক্রিমিনাল কেস বা ফৌজদারি মামলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ যে অপরাধগুলোর জন্য মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয় বা ক্ষতির সম্মুখিন হয় সেই সব ঘটনাকে ক্রিমিনাল কেস বা ফৌজদারি মামলা বলা হয়। ফৌজদারি অপরাধ হয় এমন কোন ঘটনার শিকার হলে প্রথমেই যে স্থানে এ ঘটনা ঘটেছে ওই স্থানীয় থানার সহায়তা নেয়া প্রয়োজন। কেননা স্থানীয় থানায় ফৌজদারি মামলা করতে হয়। পুলিশ উক্ত মামলা নিয়ে তদন্ত করে তারপর আদালতে প্রতিবেদন দিবে, অপরাধীদের  গ্রেপ্তার করবে, তারপর তাদের বিচার শুরু হবে। যদি কোন কারণে ফৌজদারী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে থানায় মামলা করতে গেলে উক্ত থানা যদি মামলা না নিতে চায় বা গড়িমসি করে, সেক্ষেত্রে সরাসরি আদালতে মামলা করতে হবে। আদালত উক্ত বিষয়টি আমলে নিবে এবং থানাকে এজাহার আকারে নিয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিতে পারেন।

ফৌজদারি মামলা করার নিয়ম। Criminal Cases Rules

✔️ ফৌজদারি অপরাধ হয় এমন কোন ঘটনার শিকার হলে প্রথমেই যে স্থানে এ ঘটনা ঘটেছে ওই স্থানীয় থানার ফৌজদারি মামলা করতে চলে যাবেন, ঘটনাস্থল যেই থানার অধীনে সেই থানাতে।

✔️ ঘটনাস্থল যেই থানার অধীনে সেই থানাতে এফআইআর বা এজাহার দাখিল করুন।

✔️ যদি কোন ব্যক্তির সন্ধান ২৪ ঘন্টার মধ্যে না পাওয়া যায় বা কোন ব্যক্তি হারানো গিয়েছে এই মর্মে থানায় জিডি করা যায়।  কিছু কিছু ক্ষেত্রে জিডি মামলা রুজু হয়।

✔️ আদালতে মামলা দায়ের হওয়ার পর প্রথমে মামলাটি ম্যাজিস্ট্রেট এর সামনে উপস্থাপন করা হয়।

✔️ ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত মামলাটি থানায় তদন্ত করার নির্দেশ আকারে পাঠান।।

✔️ তদন্ত শেষে থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফাইনাল রিপোর্ট অথবা চার্জশিট দাখিল করেন। ফাইনাল রিপোর্ট অর্থাৎ তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্তে বিবাদী যদি নির্দোষ প্রমাণিত হয় সেই ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করেন। যদি তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হন সে ক্ষেত্রে চার্জশিট দাখিল করেন। 

✔️ এরপর বাদির নারাজি দরখাস্ত অথবা চার্জ শুনানি হয়ে থাকে।  অর্থাৎ তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্তে বিবাদীর পক্ষে যে ফাইনাল রিপোর্ট প্রদান করেছেন সেটার বিপক্ষে বাদি নারাজি দরখাস্ত করতে পারেন। আবার বিবাদী দোষী প্রমাণিত হলেও বিবাদী নিজেও চার্জের শুনানি দাবি করতে পারেন।

✔️ চার্জ শুনানি শেষে বিবাদী যদি আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয় তাহলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়ে থাকে। আর যদি দোষী প্রমাণিত হয় সেক্ষেত্রে চার্জ গঠন করা হয়। 

✔️ চার্জশিট গঠন করার পর বিবাদী বা আসামী যদি নিজেই নিজের দোষ স্বীকার করে তাহলে মামলা এখানেই সমাপ্ত করা হয় এবং  আদালত তাকে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করেন। 

✔️ বিবাদী অর্থাৎ আসামী যদি দোষ স্বীকার না করে তাহলে শুরু হয় আদালতে যুক্তিতর্ক এবং সাক্ষ্যগ্রহণ এখান থেকেই দোষী এবং নির্দোষ নির্ণয় করা হয়।

মামলার রায় অনুযায়ী সর্বশেষ বিবাদিকে শাস্তি প্রদান করা হয় অথবা বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। 

✔️ একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল আসামি যদি গ্রেপ্তার হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে সে আদালতের কাছে জামিন আবেদন করতে পারবেন। জামিন মঞ্জুর হলে সে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারবেন। যদি জামিন মঞ্জুর না হয় সেক্ষেত্রে তাকে জেলে অবস্থান করতে হবে।

ফৌজদারি মামলা বা ক্রিমিনাল কেস করতে যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন।

বিভিন্ন ধরনের ফৌজদারি মামলা করতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হয় এবং ঐ সকল কাগজপত্র কোথা থেকে সংগ্রহ করবেন নিচের ছবিতে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হল।

মামলা করার সঠিক নিয়ম
ফৌজদারি মামলা করতে যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন

দেওয়ানী মামলা বা সিভিল কেস কি? What is a Civil Case?

মামলা করার সঠিক নিয়ম
দেওয়ানী মামলা

সিভিল কেস বা দেওয়ানী মামলা বলতে আমরা যেগুলো বুঝি সেগুলো হলো, পারিবারিক সংক্রান্ত মামলা, অর্থনৈতিক সংকট মামলা, জমিজমা সংক্রান্ত মামলা, সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলা, মানহানি সহ ইত্যাদি এসকল মামলাকে দেওয়ানী মামলা বা সিভিল কেস বলে।দেওয়ানী মামলা সিভিল কেস সাধারণত আদালতে করা হয়ে থাকে। দেওয়ানী মামলা বা সিভিল কেস করার জন্য আইনজীবী নিয়োগের ক্ষেত্রে আগে থেকে বিবেচনা করতে হবে। এই দুই ধরনের মামলার জন্য আইনজীবী আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। দেওয়ানী মামলা সিভিল কেস এ ধরনের মামলা সাধারণত অনেক জটিল হয়ে থাকে।  তাই মামলা করার পূর্বে আইনজীবীর সাথে ভাল ভাবে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সংরক্ষণ করে তারপর মামলা করা করবেন।

দেওয়ানি মামলার করার নিয়ম। Civil Case Rules

✔️ দেওয়ানী মামলা করার জন্য আপনাকে যেতে হবে সংশ্লিষ্ট আদালতে। দেওয়ানী মামলা করার পূর্বে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আপনি যে  বিষয়ে মামলা করবেন এটি  নিশ্চিত ভাবে ঐ  আদালতের এখতিয়ারভুক্ত কিনা। কেহ যদি স্বল কজেস আদালতে ২৫ হাজার টাকার অধিক মূল্যের দেওয়ানী মামলা করে তাহলে ঐ আদালতে এই মামলা এখতিয়ারভুক্ত হয় না।

✔️ সেরেস্তাদের কাছে মামলার বিস্তারিত লিখিত বিবরণ দাখিল দিতে হবে, এটা আদালতে যাওয়ার পর প্রথম কাজ। সেরেস্তাদের কাছে এই লিখিত বিবরণ কে আরজি বলা হয়ে থাকে। এই আরজির সাথে ওকালতনামা অর্থাৎ যে সকল কাগজাবলি বা ডকুমেন্টসের ওপর মামলার ভিত্তি নির্ভর করে সেসব কাগজাবলি দাখিল করতে হবে। এছাড়াও প্রসেস ফি, কোর্ট ফি,  সমন ও ডাকযোগে সমন জারির জন্য প্রয়োজনীয় প্রাপ্তিস্বীকারপত্র দাখিল করতে হবে।

✔️ মামলার আরজি আবেদন করার জন্য বাদী নিজে করতে পারবেন অথবা বাদী তার মনোনীত আইনজীবী দ্বারা এটি দাখিল করতে পারেন।  তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, মামলার মূল্যায়ন সঠিকভাবে নির্ধারিত হয়েছে কিনা অথবা কোর্ট ফি সঠিকভাবে দেওয়া আছে কিনা।

✔️ মনে রাখবেন প্রসেস ফি, কোট ফি, সমন ইত্যাদি যদি সঠিকভাবে দাখিল না থাকে অথবা দাখিলকৃত দলিল বা ওকালতনামা ইত্যাদির মধ্যে যদি কোন ধরনের গাফিলতি থাকে তাহলে সেরেস্তাদার মামলাটি স্থগিত রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে যে ভুলগুলো হয়ে থাকে এই ভুলগুলো বাদী অথবা বাদীর মনোনীত আইনজীবী শুধরে দেবেন। যদি উক্ত মামলায় কোন ধরনের কোনো সমস্যা না থাকে, সকল কাগজপত্র সঠিক থাকে তাহলে সেরেস্তাদার মামলাটি আদালতের পেশকার কাছে পাঠাবেন।  পেশকার আনুষ্ঠানিকভাবে মামলাটি শুরু করবেন। 

✔️ উক্ত মামলা আনুষ্ঠানিকভাবে যখন শুরু হয়ে যাবে তখন আদালত থেকে বিবাদীর ঠিকানায় একটি সমন পাঠানো হবে। এই সমান সরাসরি অথবা ডাকযোগে পাঠানো হতে পারে।  বিবাদী সমন পাওয়ার পরে অবশ্যই এর জবাব দিতে হবে। 

✔️বিবাদী সামনের জবাব দাখিল করার পর বাদী এবং বিবাদী উভয়ের মধ্যে আপোষ মিমাংসার একটি সুযোগ রয়েছে। যদি বাদী ও বিবাদী আপোষ করতে না চায় সে ক্ষেত্রে মামলার পরবর্তী ধাপ হিসেবে বিচার্য বিষয় গঠন হয়।

✔️ বিচার্য বিষয় যখন গঠন হবে বিচার্য বিষয় গঠন হওয়ার পর প্রথম ধাপে প্রাথমিক শুনানি হয়।  প্রাথমিক শুনানি শেষ হয়ে গেলে চূড়ান্ত শুনানি হয় এবং চূড়ান্ত শুনানি ও যুক্তিতর্কের পর সর্বশেষ মামলার রায় ঘোষণা করা হয় এবং ডিগ্রি জারি হয়।

দেওয়ানী মামলা করতে যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন

নিচের ছবিতে বিভিন্ন দেওয়ানি মামলা করতে যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন তার একটি তালিকা দেওয়া হলো।

মামলা করার সঠিক নিয়ম
দেওয়ানী মামলা করতে যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন

ডোপ টেস্ট কি? সরকারি চাকরিজীবী এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কি টেস্ট বাধ্যতামূলক?

বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মত বাংলাদেশ সরকারও বেশ কিছুদিন ধরে বেশকিছু শ্রেণি-পেশার মানুষের উপর, ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার কথা ভাবছে। ডোপ টেস্ট এর ফলে মাদকাসক্তি ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে তাকে শাস্তির আওতায় আনা যাবে।

থানায় মামলা করার নিয়ম।

ফৌজদারি অপরাধের মত কোন ঘটলে সেক্ষেত্রে থানায় মামলা করতে হবে। যদি কোন কারনে থানায় মামলা নিতে অস্বীকার করে, যদিও থানার কর্মকর্তাদের অহেতুক মামলা নিতে অস্বীকার করার কথা নয়! তারপরও যদি থানা মামলা নিতে অস্বীকার করে এরকম কোন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে বিষয়টি নিয়ে আসবেন। তাহলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ  আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। ফৌজদারি বা সিভিল কেস মামলা করার ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব থানাকে অবহিত করে সেই ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরার পাশাপাশি ঘটনার আলামত যাহাতে নষ্ট না হয়ে যায় সেদিকে গুরুত্ব সহকারে লক্ষ রাখতে হবে। কারন, মামলার আলামত নষ্ট হয়ে গেলে মামলার তদন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

থানায় এজাহার ও এফআইআর কি?

সাদা কাগজে থানায় অভিযোগকারীর যে বিস্তারিত বর্ণনা, অভিযুক্তদের নাম ও ঠিকানা ইত্যাদি লিখে  যেঅভিযোগ দেওয়া হয়। অর্থাৎ থানায় সাদা কাগজের এই অভিযোগ পত্রটিকে বলা হয় এজাহার। সাদা কাগজে লিখিত এই অভিযোগ বা এজহার থানার যে বইতে সংযুক্ত করে নথিভূক্ত করা হয়। তাকে এফআইআর বা ফার্সট ইনফরমেশন রিপোর্ট বলা হয়। এই এজাহারের ভিত্তিতে  পরবর্তীতে তদন্তে আরও কারো নাম পাওয়া গেলে কিংবা আরো কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যোগ হলে সেটা এই এফআইআর ও এজাহারের সাথে সংযুক্ত করা হয়।

বিকাশ প্রতারণা মামলা করার নিয়ম। Bkash fraud case

বিকাশ প্রতারণার মামলা করার নিয়ম

বর্তমান ডিজিটাল যুগে বাংলাদেশের সহজ-সরল এবং অতি লোভী কিছু মানুষকে টার্গেট করে, একশ্রেণীর দুষ্কৃতকারী বিকাশ প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। বিকাশের মাধ্যমে প্রতারকরা কিভাবে মানুষকে ফাঁদে ফেলে এবং এ ধরনের ফাঁদে পরে প্রতারিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কিভাবে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন এ বিষয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করছি।

যে ভাবে বিকাশের মাধ্যমে প্রতারণা করে।

বিকাশ প্রতারক দের প্রতারণার ধরন সব সময় এক থাকে না। তারা একেক সময় একেক ধরনের মানুষকে টার্গেট করে প্রতারিত করে থাকে। বিকাশ প্রতারকরা বিকাশ এজেন্ট দোকানের আশপাশে ঘোরাঘুরি করে, তারা লক্ষ্য রাখে যে সকল নাম্বারে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয় ওই সকল নাম্বারে বিকাশ কল সেন্টার পরিচয় দিয়ে ফোন করে গ্রাহক কে বলে আপনার বিকাশ নাম্বারটি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে আপডেট সংক্রান্ত জটিলতার জন্য বা অন্য কোনো কথা বলবে। এরপর তারা বলবে আপনার বিকাশ নাম্বার টি সক্রিয় করার জন্য আপনার মোবাইলে এখান থেকে একটি মেসেজ যাবে, মেসেজে যে কোডটা যাবে সেটি আমাদেরকে বলেন। এটা হল বিকাশ প্রতারক দের বিকাশ গ্রাহকের পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেওয়ার প্রধান কৌশল। গ্রাহক যখন মোবাইলে মেসেজের কোড নাম্বারটি বিকাশ প্রতারক কে জানিয়ে দেয় তার সাথে সাথে বিকাশ নাম্বারের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে টাকা উত্তোলন করে নেয়।

এছাড়াও মোবাইলে কল করে আপনার সন্তানের নামে সরকারের কাছ থেকে উপবৃত্তির টাকা এসেছে এই টাকা উত্তোলন করতে হলে সার্ভিস চার্জ বাবদ  আমাদেরকে বিকাশের মাধ্যমে এত টাকা পাঠান আমরা পুরো টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করতেছি, অথবা আপনি লটারিতে এত টাকা জয়লাভ করেছেন, আপনি জিপি, রবির শ্রেষ্ঠ গ্রাহক নির্বাচিত হয়েছেন, আপনার জন্য এতো টাকা পুরস্কার আছে।  এই পুরস্কার নেওয়ার জন্য সার্ভিস চার্জ ও ভ্যাট বাবদ এত টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দিন, তাহলে পরিষ্কারের সব টাকা আপনার কাছে পৌঁছে যাবে। এদেশের কিছু সহজ সরল মানুষ এবং অতি লোভী কিছু মানুষ এ সকল প্রতারকদের চটকদার কথা বিশ্বাস করে টাকা পাঠায় এরপর যখন কিছুই তারা পায় না তখন তারা বুঝতে পারে এটি একটি প্রতারণা, তার সমস্ত টাকাই বৃথা গিয়েছে। এভাবেই ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে বিকাশ প্রতারণার ঘটনা নানান ভাবে ঘটছে।

থানায় বিকাশ প্রতারণার মামলা করার নিয়ম। Bkash fraud case

বিকাশ প্রতারণা শিকার হলে আপনি সরাসরি থানায় গিয়ে আইসিটি আইনে মামলা করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে বিকাশ প্রতারণা যাবতীয় তথ্য গুলো সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।  আপনি বিকাশে যে নাম্বারে টাকা পাঠিয়েছেন সেই নাম্বারটি এবং কত টাকা পাঠিয়েছেন তার একটি ম্যাসেজ নিয়ে যেতে হবে।  তাছাড়াও প্রতারণার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য কোন নাম্বার যদি ব্যবহৃত হয়ে থাকে সেগুলো নিয়ে যেতে হবে। বিকাশ প্রতারণা মামলা যখন আপনি করবেন সেক্ষেত্রে আপনাকে টাকার পরিমাণ এবং কোন সময় টাকা পাঠিয়েছেন সেটি সঠিক ভাবে উল্লেখ করতে হবে।  তাছাড়াও যদি এই প্রতারণার সাথে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠানে থাকে সেই তথ্য আপনার জানা থাকলে তা তুলে ধরতে হবে।

মামলা করার পূর্বে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি টিপস।

অনেকেই থানায় এবং আদালতে মামলা করেন। মামলার সঠিক বিচার থেকে বঞ্চিত হন এবং অনেক হয়রানীর শিকার হন, এমনকি আদালত হেনস্তার শিকার হওয়ায় লাগে। এর কারণ, মামলা করার সঠিক নিয়ম এবং পদ্ধতি না জানা তাই মামলা করার পুর্বে নিচের এই পাঁচটি বিষয়েজানা থাকলে আপনি হয়রানি এবং হেনস্থার শিকার হওয়া থেকে বেঁচে যাবেন।

 ১।  আপনি যে বিষয়টি নিয়ে মামলা করবেন এই মামলাটি সামাজিকভাবে প্রতিকারযোগ্য কিনাএটি আপনাকে আগে এটি ভাল ভাবে ভাবতে হবে। যদি আপনার মামলার বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধানযোগ্য হয় তাহলে মামলা না করে তাকেই প্রাধান্য দিন। মনে রাখবেন সামাজিক সমাধানের মাধ্যমে মামলার থেকে দ্রুত সমস্যার সমাধান পাবেন। অন্যদিকে বাবি এবং বিবাদী যদি একই এলাকায় এবং দুজন একই সমাজে বসবাস করে তাই আদালতের থেকে সামাজিকভাবে সমাধান করার সুযোগ থাকলে সেটি সবথেকে ভালো হবে। যদি সামাজিক ভাবে সমাধান করা সম্ভব না হয় তারপর আপনি মামলা করুন। 

২।  মামলা জেতার বিষয়ে আত্মবিশ্বাস থাকা জরুরি। আপনি যে মামলাটি করছেন এই মামলার উপযুক্ত প্রমান পত্র এবং সঠিক সাক্ষী যদি থাকে এবং এই মামলা করে আপনি জয়লাভ করবেন এমন যদি ১০০% নিশ্চয়তা থাকে তাহলে আপনি মামলা করুন। অন্যথায় মামলা করে আপনি হয়রানির শিকার হবেন সময় এবং অর্থের ও অনেক অপচয় হবে। 

৩। মামলা করার পূর্বে আপনি যে বিষয়ে মামলা করবেন এই মামলা সম্পর্কে অভিজ্ঞ এবং এই ধরনের মামলায় পরিচালনা করে এমন আইনজীবীর পরামর্শ নিন। কারণ, মামলা করার পূর্বে আইনজীবীর পরামর্শ নিলে আইনজীবী আপনাকে মামলার জটিল বিষয়গুলো সহজ করে দিবেন এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সরবরাহ করবেন। মামলা পরবর্তীতে ওই আইনজীবীকে মামলা পরিচালনার জন্য নিয়োগ দিন।  

৪। মামলা কোন আদালতে করলে আপনার জন্য সহজ হবে এবং আপনি যার বিরুদ্ধে মামলা করবেন  ঐ ব্যক্তি যাতে এখানে পাল্টা মামলা করার করে সুবিধা করতে না  পারে এ সকল বিষয় গুলি আগেভাগে ভাবতে হবে।  তাই আপনি মামলা করার পূর্বেই কোন আদালতে মামলা করলে আপনার জন্য সুবিধা হবে সেখানে মামলা করুন। 

৫। আপনার মামলা যদি জমিজমা-সম্পত্তি সংক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে মামলা করার পূর্বে সম্পত্তির বাজার মূল্য ভেবে মামলা করার চিন্তা করুন। কারন, আপনার সম্পত্তি মূল্য উদাহরণস্বরূপ যদি  লক্ষ টাকা হয়, কিন্তু আপনি মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে এর থেকেও অধিক খরচ হয়ে যাবে এবং অনেক সময় নষ্ট হবে।  সেক্ষেত্রে এসকল ছোট বিষয়ে মামলা না করে সামাজিকভাবে সমাধান করার চেষ্টা করুন। 

শেষকথা

মামলা একটি জটিল বিষয়।  সর্বোপরি মামলা পরিচালনা করা কখনোই সহজ নয় এটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। উপরে এতক্ষণ মামলার বিষয়ে  যে  আলোচনা করেছি আশা করি এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে আপনি কিছু ধারণা পেয়েছেন।  আপনার যদি কোন মামলা করার প্রয়োজন হয়, যদি মামলা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, সেক্ষেত্রে মামলা করার পূর্বে এই বিষয়ে অভিজ্ঞ কোনো আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ, অভিজ্ঞতা না থাকলেও আপনি নিজে নিজে মামলা পরিচালনা করে সফল হওয়া কঠিন।  তাই, মামলা করে, মামলায় সফলতা চাইলে, মামলায় জয়লাভ করতে চাইলে মামলার উপযুক্ত প্রমাণাদি, সাক্ষী এবং অভিজ্ঞ একজন আইনজীবী থাকা জরুরি।

কি কি কারনে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা করা যায়?

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন বাংলাদেশ এর ২০০০ (সংশোধিত ২০১৩) অনুসারে: অগ্নিসংযোগ বা ক্ষয়কারী, নারী পাচার, শিশু পাচার, নারী ও শিশুদের অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, ধর্ষণ-সংক্রান্ত মৃত্যু, আত্মহত্যার প্ররোচনা। নারী, যৌন নিপীড়ন, যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানো, ভিক্ষাবৃত্তির উদ্দেশ্যে শিশুদের অঙ্গচ্ছেদ  ইত্যাদি, ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া শিশুদের সম্পর্কিত বিধান নারী নির্যাতন আইনে রয়েছে।

দেওয়ানী মামলা নিষ্পত্তি হতে কত দিন সময় লাগে?

একটি দেওয়ানী মামলা ১২ থেকে ১৩ টি ধাপের এর মাধ্যমে শেষ হয়।  প্রতিটি ধাপ যদি কমপক্ষে দুই মাস সময় লাগে তাহলে একটি দেওয়ানী মামলা শেষ হতে কমপক্ষে দুবছর সময় লাগে।

ওয়ারেন্ট ছাড়া পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে আসলে করণীয় কি?

আমাদের মধ্যে একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে চাইলে ওয়ারেন্ট লাগবে আসলে এই বিষয়টি পরিপূর্ণ সঠিক নয়। যদি আমলযোগ্য কোন মামলা হয় সেক্ষেত্রে পুলিশ বিষয়টি প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে লিপিবদ্ধ করে এবং এই অপরাধগুলো এমন হয় যে অপরাধী আইনের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে।  তাই এসব বড় ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে আইন পুলিশ কে অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের ক্ষমতা দিয়েছেন। তবে হ্যাঁ, আপনি যদি অপরাধী না হয়ে থাকেন যদি আপনাকে পুলিশ গ্রেফতার করতে আসে, আপনার কাছে যদি সন্দেহজনক মনে হয় সেই ক্ষেত্রে নিকটস্থ থানায় ফোন করে বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা নিয়ে অথবা ৯৯৯ ফোন করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নিতে পারেন।

নারী নির্যাতন মামলা কোথায় করব?

নারী নির্যাতনের মতো কোনো ঘটনার শিকার হলে নির্যাতিতা বিচারপ্রার্থীর প্রথম কাজ হলো স্থানীয় থানায় বিষয়টি জানানো। যদি কোন কারনে থানায় মামলা নিতে না চায় সেই ক্ষেত্রে সরাসরি সংশ্লিষ্ট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগ এর মাধ্যমে উক্ত অপরাধের বিচার চেয়ে মামলা দায়ের করতে পারেন। তবে মামলা করার পূর্বে আপনাকে উপযুক্ত প্রমাণাদি সংযুক্ত করতে হবে।  যেমন প্রথম কাজ হলো আপনার নির্যাতনের প্রমাণস্বরূপ ডাক্তারি সনদপত্র।

তথ্যসূত্র

বিবিসি বাংলা

আইন ও বিচার বিভাগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

প্রগ্রেস বাংলাদেশ

আরও কিছু অন্যান্য তথ্য

বিয়ের কাবিননামা কিভাবে তুলতে হয়? বিয়ের কাবিননামা প্রয়োজনীয়তা কি? বিয়ের কাবিননামা না থাকলে কি ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় এসকল বিষয় নিয়ে আমরা বিস্তারিত এখানে ক্লিক করুন>>>>

One thought on “মামলা করার সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি। সাধারন ডায়েরি বা জিডি”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *