ওমরাহ হজ্ব পালন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল। এটি পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। ওমরাহ হজ্ব কোন ফরজ এবং ওয়াজিব নয়। হজ্ব যেমন জীবনে একবার ফরজ। তেমনি ওমরাহ হজ্ব জীবনে একবার সুন্নত। ওমরাহ হজ্ব এর জন্য নির্দিষ্ট কোন দিন এবং সময় নেই। তবে হজের নির্দিষ্ট দিনে ওমরা পালন করা যাবে না। কিন্তু রমজান মাসে ওমরাহ পালন করলে হজের সমপরিমাণ সওয়াব পাওয়া যাবে।
যারা ওমরাহ হজ্ব করার জন্য সম্পূর্ণ নতুন, ইতিপূর্বে মক্কা-মদিনায় যাননি, তাদের ওমরাহ হজ্ব করার পূর্বে প্রত্যেকেরই ওমরাহ করার যাবতীয় নিয়মকানুন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করা জরুরি। একজন ব্যক্তি পরিপূর্ণ বিশুদ্ধভাবে কিভাবে ওমরাহ হজ্ব পালন করতে পারবেন সেই বিষয়ের নিয়মকানুন গুলো বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি এই লেখাটি পড়ে আপনি ওমরাহ হজ্ব সম্পর্কে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন ইনশাহআল্লাহ।
পরিপূর্ণ বিশুদ্ধভাবে ওমরাহ হজ্ব শেষ করার জন্য আপনাকে নিচের এই পাঁচটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে।
১। ইহরাম বাঁধা (এটি ওমরাহ হজ্ব এর ফরজ)
২। তাওয়াফ (এটি ওমরাহ হজ্ব এর ফরজ)
৩। তাওয়াফের দুই রাকাত নামাজ (এটি ওমরাহ হজ্ব এর ওয়াজিব)
৪। সায়ী ( এটি ওমরাহ হজ্ব এর ওয়াজিব)
৫। মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা (এটি ওমরাহ হজ্ব এর ওয়াজিব)
প্রথম ধাপঃ
১। ইহরাম বাঁধা (এটি ওমরাহ হজ্ব এর ফরজ)
ইহরাম বাঁধা এটি ওমরাহ হজের একটি ফরজ কাজ। ইহরামের ভিতরে আবার নয়টি অংশ আছে। নয়টি অংশ কিভাবে সহি শুদ্ধভাবে পালন করবেন। সে বিষয়ে আমরা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করছি।
◾ ইহরামের কাপড় পরিধানের পূর্বে করণীয়ঃ
ওমরাহ হজ্ব এর ফরজ ইহরাম। আর ইহরামের কাপড় পরিধানের পূর্বে নখ কাটা, গোসল করা শরীরের গুপ্ত লোমগুলো পরিস্কার করা, এবং শরীরে আতর লাগানো সুন্নত, তবে এটা পুরুষদের জন্য মহিলাদের জন্য নয়। মনে রাখতে হবে ইহরামের কাপড় পরিধানের পর শরীরে বা ইহরামের কাপড়ে কোন আতর লাগানো যাবে না।
◾ পুরুষদের জন্য ইহরামের কাপড় পড়ার বিধানঃ
ইহরামের কাপড় হিসেবে পুরুষরা সেলাই বিহীন মাত্র দুই টুকরা কাপড় পরবেন। ছোট টুকরো কাপড় টি শরীরের নীচের অংশে লুঙ্গির মত করে পড়বেন এবং বড় টুকরো কাপড়টি গায়ে চাদরের মত করে পড়বেন। কোন কিছু দিয়ে মাথা ঢাকা যাবে না অর্থাৎ মাথায় টুপি পড়া যাবে না এবং মাথায় রুমাল ব্যবহার করা যাবে না, মাথা খোলা রাখতে হবে। পুরুষরা পায়ের পিছনের গোড়ালির অংশ খোলা রাখতে। পায়ের পিছনের গোড়ালি ঢেকে যায় এমন কোন জুতা, স্যান্ডেল ও মোজা পরতে পারবেন না।
◾ মহিলাদের জন্য ইহরামের কাপড় পড়ার বিধানঃ
সেলাই যুক্ত যে কোন ধরনের পোশাক মহিলারা ইহরাম এর কাপড় হিসেবে পরিধান করতে পারবেন। কিন্তু মহিলারা ইহরাম পোষাক হিসাবে নেকাব এবং হাতমোজা পরতে পারবেন না। তবে চেহারা যাতে কোন পরপুরুষ দেখতে না পায় সেজন্য বড় ওড়না বা এই জাতীয় কাপড় দিয়ে নিজের চেহারা ঢেকে রাখতে হবে।
◾ ইহরামের কাপড় কোন স্থান থেকে পড়বেন!
মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট কোন ইহরামের পোশাক নেই। মহিলারা পছন্দমত পোশাক ঘর থেকে পড়ে বের হবেন।
ইহরামের কাপড় মিকাতের পূর্বে যে কোন স্থান থেকে পরতে পারবেন।
আপনি যদি মক্কার উদ্দেশ্যে অথবা সরাসরি জেদ্দা ভ্রমণের জন্য ফ্লাইটে উঠেন, সেক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন শেষ করে ফ্লাইটে উঠার আগে নামাজের রুমে গিয়ে ইহরামের কাপড় পরতে পারেন। আর যদি আপনার ফ্লাইটটি সরাসরি না হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট হয়। সেক্ষেত্রে যে এয়ারপোর্টে আপনার ফ্লাইট ট্রানজিট নিবে, সেই এয়ারপোর্টের (পেয়ার রুমে) নাজের স্থানে গিয়ে আপনি ইহরামের কাপড় পড়তে পারবেন।
যারা আগে মদিনা যাবেন এবং পরবর্তিতে গাড়িতে, ট্রেনে বা ফ্লাইটে মক্কায় এসে এটি ওমরাহ হজ্ব করবেন তাঁরা মদিনার যেখানে থাকবেন হোটেল বা বাসা, সেখান থেকেই ইহরামের কাপড় পরিধান করে নিতে পারবেন। তবে টি বিষয়ে খেয়াল রাখবেন আপনি যদি গাড়িতে করে মক্কায় ভ্রমণ করেন, সেক্ষেত্রে পথিমধ্যে মিকাতে গোসল করে ইহরামের কাপড় পরা বেশী উত্তম।
মিকাতে গোসল করা হলো মুস্তাহাব। পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য মিকাতে আলাদা আলাদা গোসলের খুব সুন্দর ব্যবস্থা আছে।
মিকাত কি?
ওমরাহ হজ্ব করার নিয়ত যে স্থান থেকে করতে হয় এবং ইহরাম বাঁধতে হয় সে স্থান কেই মিকাত বলে। অর্থাৎ মিকাত বলতে কোন স্থানের সীমানাকে বুঝানো হয়। একটা বিষয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, অনেকে ইহরামের কাপড় পরিধান কেই ইহরাম বাঁধা মানে করে! মনে রাখবেন ইহরাম বাঁধা মানে ইহরামের কাপড় পরিধান করা নয়। মিকাত থেকে উমরাহর নিয়ত করার পর থেকেই ইহরাম বাঁধা হয়।
ওমরাব হজ পালনের জন্য মক্কা এবং মদিনায় উদ্দেশ্যে আপনি যেই ফ্লাইটে যাত্রা করবেন।
ফ্লাইট থেকে যখন ঘোষণা দেয়া হবে যে – “কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা মিকাত অতিক্রম করবো” ঠিক সেই সময়টিতে আকাশে ফ্লাইটে অবস্থানকালে ওমরাহ হজ্ব এর নিয়ত করতে হবে। মনে রাখবেন জেদ্দায় ফ্লাইট অবতরণ করার আনুমানিক ৫০ মিনিট পূর্বে এই ঘোষণা দেয়া হয়ে থাকে এবং জেদ্দায় অবতরণ করার আনুমানিক ৩০ মিনিট পূর্বে ফ্লাইটটি মিকাত অতিক্রম করে। যদু কেহ প্রথমে মদিনা যেতে চান এবং মদিনা থেকে পরে গাড়িতে বা ট্রেনে মক্কায় গিয়ে ওমরাহ হজ্ব করতে চান, সে ক্ষেত্রে গাড়িতে যাত্রাকরার আনুমানিক ২০ মিনিট সময়ের রাস্তা অতিক্রম করার পর যুলহুলাইফা বা বীরে আলী এই স্থানে মিকাত পাওয়া যাবে এবং সেখান থেকেই উমরাহর নিয়ত করতে হবে। কিন্তু যদি গাড়িতে না গিয়ে ট্রেনে যাত্রা করেন সে ক্ষেত্রে মক্কায় যাওয়ার ট্রেনটি কিন্তু বীরে আলী মিকাত হয়ে মক্কা যায় না এবং মিকাত নির্দেশক কোন ঘোষণা বা নির্দেশনা দেয়না। এজন্য যারা মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে ট্রেনে যাত্রা করবেন। তারা ট্রেন ছাড়ার ৫/১০ মিনিট পরেই উমরাহর নিয়ত করে নিবেন।
ওমরাহ হজ্বের নিয়ত এর নিয়ম পুরুষদের জন্য।
পুরুষদের উমরাহর নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে বলতে হয় (নিজেরটা নিজে শোনা যায় এমন আওয়াজে) ।
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ عُمْرَةً
বাংলা উচ্চারণ – লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা ওমরাহ। এর অর্থ – আল্লাহ আমি উমরাহর নিয়ত করছি।
মহিলাদের জন্য ওমরাহ হজ্বের নিয়ত এর নিয়ম।
মহিলারা মনে মনে নিয়ত করবেন।
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ عُمْرَةً
বাংলা উচ্চারণ – লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা ওমরাহ। এর অর্থ – আল্লাহ আমি উমরাহর নিয়ত করছি।
ওমরাহ হজ্বের নিয়ত সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা। মনে রাখবেন, যদি কেহ ওমরাহ হজ্বের নিয়ত করতে ভূলে যায় এবং সে মিকাত অতিক্রম করে ফেলে! এমনটি হলে তাঁকে অবশ্যই আবার নিকটস্থ মিকাতে এসে নিয়ত করে ওমরাহ হজ্বের করার জন্য যেতে হবে। যদি সে পুনরায় মিকাতে এসে নিয়ত না করে করে তবে তাঁকে একটি দম দিতে হবে। তদ্রূপ কেহ যদি ইহরাম বাঁধার বা ওমরাহ হজ্বের নিয়ত করার পর কিছু নিষিদ্ধ কাজ রয়েছে, ভুল করে ওই নিষিদ্ধ কাজগুলোর কোনোটি যদি করে ফেলে তাহলেও দম দিতে হবে।
ওমরাহ হজ্বে দম দেয়া কি?
দম দেয়া মানে হলো। কোন পশু কুরবানি দেয়া। সেটি একটি ছাগল, দুম্বা বা কুরবানি যোগ্য কোন পশু। কুরবানী দেওয়ার পর সম্পূর্ণ গোস্তটি মক্কায় মসজিদুল হারামে গরীবদের মধ্যে বিতরণ করে দিতে হবে। ওমরাহ হজ্বকারী নিজে এই কুরবানির গোস্ত খেতে পারবেন না।
ইহরাম বাঁধার পর বা ইহরাম অবস্থায় যে সকল কাজ নিষিদ্ধ।
ওমরাহ হজ্ব কারী ইহরাম বাঁধার পর কিছু কাছ থেকে কাজ কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইহরামকালে নিষিদ্ধ কাজগুলো হলঃ
◾ শরীরের কোন অংশ থেকেই কোন চুল বা পশম কাটা বা ছিঁড়ে যাবে না।
◾ হাত ও পায়ের নথকাটা যাবে না।
◾ ইহরামের কাপড় ও শরীরে ঘ্রাণযুক্ত তৈল বা আতর লাগানো যাবে না।
◾ ইহরাম বাঁধার পর স্বামী-স্ত্রীর সংগম করা যাবে না। এমন কি কোন প্রকার যৌন উত্তেজনামূলক আচরন ও কোন কথা বলা ও যাবে বা।
◾ কোন প্রকার পশু পাখি শিকার করা যাবে না।
◾ কোন প্রকার জীবজন্তু, কোন প্রণী হত্যা করা যাবে না। (উদহরণ-গায়ে মশা, মাছি বসলেও হত্যা করা যাবে না)
◾ ইহরাম বাঁধার পর বিয়ে সংক্রান্ত কোন প্রস্তাব দেয়া ও এই জাতীয় কোন ঘটকালি বা মধ্যস্থতা করা যাবে না।
◾ পুরুষদের মাথা ঢাকা যাবে না। অর্থাৎ টুপি বা রুমাল এ জাতীয় কোন কিছু দিয়ে মাথা ঢাকা যাবে না।
◾ পুরুষদের ক্পায়ের পিছনের গোড়ালি ঢেকে রাখা যাবে না। অর্থাৎ পায়ের পিছনের গোড়ালি ঢেকে যায়, এমন স্যান্ডেল, জুতা, মোজা পরা থেকে বিরত থাকতে হবে।
◾ মসজিদুল হারাম এই এলাকার ভিতরে কোনো গাছ কাটা ও গাছের পাতা ছেঁড়া বা উপড়ে ফেলা যাবে না।
◾ কোন প্রকার ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া যাবে না।
◾ পুরুষদের ক্ষেত্রে সেলাই যুক্ত কোন কাপড় বা পোশাক পরিধান করা যাবে না।
তালবিয়া পাঠ
ওমরাহ হজ্বের নিয়ত করার পর পরই বেশী বেশী তালবিয়া পাঠ করতে হবে। দলগত ভাবে তালবয়া পাঠ করা যায় না। তালবিয়া একক ভাবে পাঠ করতে হয়। পুরুষরা তালবিয়া উঁচু আওয়াজে পাঠ করতে হবে। যেন একে অপরে কাবে শোনা যায়।
পুরুষদের মতো উঁচু আওয়াজে তালবিয়া মহিলারা পাঠ করতে পারবেন ন। মহিলাগণ তালবিয়া মনে মনে পাঠ করবেন।
তালবিয়া আরবিতে।
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنَّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِكَ
তালবিয়া বাংলা উচ্চারণ – লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাঈক। ইন্নাল-হামদা ওয়ান্নি-আ-মাতা লাকা ওয়াল-মুলক। লা শারীকা লাক।
তালবিয়ার অর্থ – আমি হাজির হে আল্লাহ। আমি হাজির। আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোন অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার। আপনার কোন অংশীদার নেই।
বিয়ের কাবিননামা কি? অনলাইনে বিয়ের কাবিননামা তোলা সম্ভব?
দ্বিতীয় ধাপঃ
২। তাওয়াফ এটি ওমরাহ হজ্ব এর ফরজ
তাওয়াফ এটি ওমরাহ হজ্বের একটি ফরজ কাজ। তাওয়াফ সহি সুদ্ধভাবে কিভাবে সম্পন্ন করবেন, এ বিষয়ে আমরা নিচে আলোচনা করেছি।
ওমরাহ হজ্বের জন্য আপনি পবিত্র মক্কায় পৌঁছার পর তাওয়াফ শুরু করার আগে যদি সম্ভব হয়, আপনি যে হোটেল থাকবেন বা বাসা থেকে গোসল করে নিবেন। গোসল এটি একটি মুস্তাহাব কাজ। মাসজিদুল হারামে ডান পা দিয়ে প্রবেশ করবেন এবং নিচের এই দু’আ পড়বেন।
মসজিদুল হারামে প্রবেশের দোয়া।
بسم الله و الصلاة و السلامُ عَلَى رَسُولِ اللهِ أَعوذُ بِالله العظيم ويوجهه الكريم وسلطانه القديم من الشيطان الرجيم اللهُمُ افْتَحْ لِي ابْوَابَ رَحْمَتِكَ
বাংলা উচ্চারণ – বিসমিল্লাহি ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আউজুবিল্লাহিল আজিম ওয়া বি-ওয়াজ হিহিল কারিম। ওয়া সুলতানিহিল কাদিমি মিনাশশায়ত্বানির রাজিম। আল্লাহুম্মাফতা হলি আবওয়াবা রাহমাতিকা।
দোয়ার অর্থ – আল্লাহর নামে শুরু করছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। হে আল্লাহ আমার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিন। আমার জন্য আপনার রহমতের দুয়ারগুলো খুলে দিন। আমিন।
দোয়া পড়তে পড়তে মাতাফে পৌঁছালেন। মাতাফে হলো কাবাঘরের চারদিকের খোলা তাওয়াফের স্থান। এখানে এসে তালবিয়া পাঠ করা বন্ধ করে দিবেন। এরপর কাবা ঘরের এক কোনায় হাজরে আসওয়াদ আছে। সেই কোনায় গিয়ে পুরুষরা তার ডান কাঁধ খোলা অবস্থায় রেখে শরীরের উপরের অংশে ইহরামের কাপড়টি পরবেন। তারপর পুরুষ ও মহিলা উভয়ই ডান হাত হাজরে আসওয়াদ বরাবর ইশারা করবেন, এবং কাবাকে বাম দিকে রেখে ডানদিক থেকে তাওয়াফ করা শুরু করবেন। তাওয়াফের সাতটি চক্কর দিতে হবে। প্রতি চক্করের শুরুতে এভাবে হাজরে আসওয়াদ বরাবর গিয়ে ডান হাত তুলে ইশারা করবেন। মনে রাখবেন হাজরে আসওয়াদে ইশারা করে হাতে চুমু খাওয়া যাবেনা, এটা বেদাত। (কিন্তু হাযরে আসওয়াদ চুমু খেয়ে অথবা ডান হাত দিয়ে স্পর্শ করে তাওয়াফ করা সুন্নত। ওইখানে ওই সময় হাজীদের অতিরিক্ত ভিড়ের জন্য এটা করা সম্ভব হয় না। যদি আপনার পক্ষে সম্ভব হয় হাজরে আসওয়াদে চুমু খেয়ে অথবা ডান হাত দিয়ে স্পর্শ করে তাওয়াফ শুরু করবেন।
কিন্তু মনে রাখবেন হাজরে আসওয়াদের চুমু খাওয়ার জন্য এই ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে অন্য কোন হাজী কে কষ্ট দেওয়া যাবে না।) হাজরে আসওয়াদে ইশারা করার সময় বলবেন “আল্লাহু আকবার”। তাওয়াফের সাতটি চক্রের প্রথম তিনটি চক্করে পুরুষরা দৌড়ানোর ভান করে জোরে জোরে হাঁটবে। এবং পরের চারটি চক্কর স্বাভাবিকভাবে হাঁটবেন। এভাবে সাতটি চক্কর পুরুষরা সম্পন্ন করবেন। মহিলারা সাতটি চক্কর দেওয়ার সময় স্বাভাবিকভাবে হাঁটবে। তাওয়াফ করার সময় হাযরে আসওয়াদ যে কর্নারটি আছে তার আগের কোর্নাটিকে বলা হয় ইয়ামানি কর্নার। যদি সম্ভব হয় তবে তাওয়াফ চলাকালীন এই ইয়ামানি কর্নারটি হাত দিয়ে স্পর্শ করবেন, যদি হাত দিয়ে স্পর্শ করা সম্ভব না হয় তাহলে তাওয়াফ চালিয়ে যাবেন। ইয়ামানি কর্নারে হাত দিয়ে স্পর্শ করার সুন্নত। তবে মনে রাখবেন ইয়ামানি কর্নারের চুমু খাওয়া যাবেনা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখবে, তাওয়াফ করার সময় হিজড়ে ইসমাইল বা হাতিমের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করা যাবে না। কারণ হিজরে ইসমাইল বা হাতিম এটি কাবারই একটি অংশ। আর কাবার ভিতরে দিয়ে তাওয়াফ করা যায়না।
এবার তাওয়াফের সাতটি চক্কর শেষ হওয়ার পর। পুরুষরা তার খোলা ডান কাঁধ আবৃত করে ফেলবেন। অর্থাৎ ইহরামের কাপড় চাদরের মতো করে শরীরে পড়বেন।
তাওয়াফ করার সময় এর দোয়া।
তাওয়াফ করার সময় যে কোন দোয়া করা যায়। কিন্তু রুকনে ইয়ামানী কর্নার থেকে হাযরে আসওয়াদ কর্নার পর্যন্ত আল্লাহ রাসুল একটি দোয়া করতেন এই দোয়াটি করা সুন্নত। যে দোয়াটি আমরা নামাজ শেষ হওয়ার পরে বেশিরভাগ সময় মোনাজাতে করে থাকি।
দোয়াটির বাংলা উচ্চারণ – রাব্বানা আতিনা ফিদ দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আ’জাবান্নার।
তৃতীয় ধাপঃ
৩। তাওয়াফের দুই রাকাত নামাজ।
তাওয়াফে দুই রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব। তবে এটি তাওয়াফ শেষ করার পর আদায় করতে হবে। তাওয়াফের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই এবং নিষিদ্ধ ও কোন সময়ও নেই। এটি যেকোন সময়ে আপনি আদায় করতে পারবেন। তবে পবিত্র কাবা ও মাকামে ইব্রাহিম কে সামনে রেখে এই নামাজ পড়া বেশী উত্তম। যদি ভিড়ের কারণে মাকামে ইব্রাহিম কে সাৃনে রেখে নামাজ আদায় করা সম্ভব না হয় তবে মাসজিদুল হারামের যেকোনো যায়গায় আদায় করলে চলবে। মনে রাখবেন, মহিলা ও পুরুষ একসাথে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা যাবে ন।
তাওয়াফের এই দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজে প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহার সাথে সুরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পড়া উত্তম। যদি আপনার এই সূরা জানা না থাকে তবে সুরা ফাতিহার সাথে যে কোন সুরা পড়ে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
তাওয়াফের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করার পর, দাঁড়িয়ে বিসমিল্লাহ্ বলে পবিত্র জমজমের পানি পান করবেন। এই সময়টায় জমজমের পানি পান করা সুন্নত। জমজমের পানি পান করা শেষে আরো বরকতের জন্য একটু পানি হাতে নিয়ে মাথায়, মুখে এবং গায়ে মাখা উত্তম। মাতাফের পাশেই জমজমের পানি পানের ব্যবস্থা আছে।
চতুর্থ ধাপঃ
৪। সায়ী ( এটি ওমরাহ হজ্ব এর ওয়াজিব)
সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সাতবার চক্কর দেওয়া কে সায়ী বলে।
সাফা পাহাড় থেকে সায়ী শুরু করতে হয়। সায়ী শুরু করার জন্য সাফা পাহাড়ে উঠার সময় এই দু’আটি পড়বেন।
বাংলা উচ্চারণ – ইন্নাস সফা ওয়াল মারওয়াতা মিং শাআ’ইরিল্লাহ।
দোয়ার অর্থ – নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহ্র নিদর্শনসমুহের অন্তর্ভুক্ত।
যখন সাফা পাহাড়ে পৌঁছে যাবেন, তখন কাবার দিকে মুখ করে মুনাজাতের মত দুই হাত উপরে তুলে নিচের এই দু’আটি পড়বেন। এই দু’আ আমাদের নবী করিম (সাঃ) পড়েছিলেন। দোয়া শুরু করার পূর্বে তিনবার “আল্লাহু আকবর” বলবেন।
দোয়াটি হলো।
لا إله إلا الله وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرُ، لا إله إلا الله الْعَدْهَبَحَبَهَهُ قَدِيرُ، لا إله إلا الله وَحْدَهُ الْجَزَهُ
বাংলা উচ্চারণ – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হাম্দু ওয়া হুয়া আলাকুল্লি শাইয়িং কদির। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু আনজাযা ওয়াদাহু ওয়া নাসর আবদাহু ওহাঝামাল আহঝাবা ওয়াহদাহু।
দোয়ার অর্থ – আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মাবূদ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই, সকল রাজত্ব ও প্রশংসা তাঁর জন্য; তিনি সমস্ত বস্তুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবূদ নেই। যিনি স্বীয় ওয়াদা পূরণ করেছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন, আর তিনি একাই সম্মিলিত বাহিনীকে পরাস্ত করেছেন।
এই দোয়াটি শেষ করে নিজের পছন্দমত দু’আ পড়বেন।
এভাবে আবারো দ্বিতীয় ও তৃতীয় বারের জন্য আরবিতে প্রথম যে দোয়াটি পরেছিলেন সেটা আবার পড়বেন, তবে এখন এই দোয়াটি পড়ার জন্য আল্লাহু আকবার বলতে হবেনা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বার দোয়া শেষে নিজের পছন্দমত দোয়া করবে।
উল্লেখ্য যে, এই স্থানটি দু’আ কবুলের জায়গা তাই এখানে নিজের যত বেশি বেশি দু’আ আছে সব করবেন।
তৃতীয়বার দোয়া সম্পন্ন হওয়ার পর এবার সায়ী করা শুরু করতে হবে। সাফা পাহাড় থেকে মাওয়া পাহাড়ের দিকে স্বাভাবিকভাবে হাঁটা শুরু করবেন। কিছুক্ষণ হাঁটার পরে দেখবেন একটা জায়গায় সবুজ আলো দিয়ে চিহ্নিত করা আছে। এই সবুজ আলো দিয়ে চিহ্নিত স্থানটিতে পুরুষরা দৌড়ানোর ভান করে একটু জোরে জোরে হাঁটবে। তবে মহিলারা স্বাভাবিকভাবেই হাঁটবে। সবুজ আলোর চিহ্নতে স্থানটি শেষ হলে পুরুষরা স্বাভাবিক ভাবে হাঁটে মাওয়া পাহাড়ে পৌঁছাবেন। এভাবে সায়ীরর প্রথম চক্র সম্পন্ন হল। সায়ী করার সময় নির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই। তবে নিজের ইচ্ছামত আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারবেন।
মাওয়া পাহাড়ে পৌঁছানোর পর কাবার দিকে মুখ করে আল্লাহর দরবারে দুই হাত মুনাজাত এর মত তুলে সাফা পাহাড়ে ওঠার পর প্রথম যে দোয়াটি পড়ে ছিলেন সেই দোয়াটি তিনবার পড়বেন। দোয়া করা শেষ হলে মাওয়া পাহাড় থেকে সাফা পাহাড়ের দিকে হাটা শুরু করবেন। আগের মতো সবুজ আলো চিহ্নিত স্থানে আসলে, পুরুষরা দৌড়ানোর ভান করে জোরে জোরে হাঁটবেন। এবং মহিলারা স্বাভাবিক গতিতে হাঁটবেন। এভাবে মোট সাতবার চক্কর দিতে হবে। সপ্তম চক্করটি মাওয়া পাহাড়ে গিয়ে শেষ হবে। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখবেন। সাফা পাহাড়ের প্রথমবার ওঠার পর দাঁড়িয়ে তিনবার দোয়া করবেন এবং মাওয়া পাহাড়ে প্রথম বার ওঠার পর দাঁড়িয়ে তিনবার দোয়া করবেন। এরপর ৫ বার চক্কর দেওয়ার সময় দোয়া করার দরকার নেই। তবে সায়ী করার সময় চক্করের মধ্যখানে নিজের পছন্দমত দোয়া করবেন।
পঞ্চম ধাপঃ
৫। মাথা মুণ্ডন বা চুল ছোট করা (এটি ওমরাহ হজ্ব এর ওয়াজিব)
সায়ী পূর্ণ করার পর পুরুষ হাজীরা মাথা মুণ্ডন করবেন অথবা মাথার চারদিকের চুল সমান পরিমাণে ছেঁটে নিবেন। তবে মাথা মুণ্ডন করা উত্তম। মাথামুণ্ডু না করে চুল ছোট করবেন, তাদের ক্ষেত্রে চতুর্পাশ দিয়ে সমান পরিমান কাটতে হবে। মহিলাদের জন্য চুলের ব্যাপারে বিধান হলো। মাথার সবগুলো চুল একত্র করে, নিজে অথবা মাহারাম পুরুষ দিয়ে চুলের অগার অংশ থেকে এক ইঞ্চি পরিমান কেটে নিবেন। এভাবে ওমরাহ হজ্ব পূর্ণ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। ইহরাম বাঁধার পর যেসকল কাজগুলো নিষিদ্ধ ছিল ওই কাজগুলো এখানে হালাল হয়ে যাবে।
শেষ কথা
পরিপূর্ণ শুদ্ধভাবে ওমরা হজ সম্পন্ন করার জন্য সম্পূর্ণ নিয়ম কানুনগুলো আমরা এখানে উল্লেখ করেছি। আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আপনি ওমরাহ হজ্ব সহি শুদ্ধভাবে সম্পাদন করতে পারবেন। যদি আপনার আরো কোন কিছু সহি শুদ্ধভাবে জানার আগ্রহ বা ইচ্ছা থাকে, তাহলে যেসকল হাজিরা একাধিক ওমরার সম্পন্ন করেছে বা অধিক জ্ঞান সম্পন্ন অথবা ভালো কোন ওলামায়ে কেরাম এর কাছ থেকে জেনে নিবেন।