ভুমি অফিসে না গিয়ে এখন আপনি ঘরে বসে নিজেই অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান ও দাগের তথ্য যাচাই করতে পারবেন। জমি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে জমির সঠিক মালিকানা যাচাই করার জন্য জমির পর্চা/খতিয়ান ও দাগের তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়। আর এটি করতে গিয়ে ভূমি অফিসে ঘোরাঘুরি করে মাঝখানে অনেক সময় নষ্ট হয়। এই সময় নষ্ট না করে খুব সহজে কিভাবে অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করবেন এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
খতিয়ান বা জমির পর্চা কি?
জমির মালিকানা সহ অন্যান্য যেসব তথ্য, সরকারি নথিতে যেটি রেকর্ড হয়, এই রেকর্ড কেই বলা হয় জমির খতিয়ান বা জমির পর্চা। জমির দলিলের পাশাপাশি খতিয়ানে জমির মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
অনলাইনে জমির পর্চা,খতিয়ান যাচাই করতে কি কি লাগে? Online a khatian check
অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান ও দাগের তথ্য যাচাই করার জন্য আপনাকে আগে থেকে কিছু সাধরন তথ্য হাতের কাছে রাখতে হবে।
১। জমির ঠিকানা।
জমি যে ঠিকানায় অবস্থিত সেটি পূর্ণাঙ্গভাবে জানা থাকতে হব। যেমন – ◾ জমির মৌজা ও গ্রামের নাম ◾ উপজেলার নাম ◾ জেলার নাম এবং ◾ বিভাগের নাম।
২। খতিয়ান তথ্য।
◾ দাগ নম্বর ◾ খতিয়ান নাম্বর ◾ জমির মালিকের নাম ও ◾ পিতা ও স্বামীর নাম এর যেকোনো একটি তথ্য জানা থাকতে হবে।
কিভাবে জমির পর্চা যাচাই ও অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করতে হয? Online a khatian check
আপনার কম্পিউটার এবং মোবাইলের মাধ্যমেই আপনি অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান (জমির পর্চা যাছাই) ও দাগের তথ্য যাচাই করতে পারবেন। কম্পিউটার ব্যবহার করে অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করার জন্য গুগল প্লে-স্টোর থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের (ekhatian) ই-খতিয়ান নামের এই অ্যাপস টি আপনার মোবাইলে ইন্সটল করতে হবে। কম্পিউটারের মাধ্যমে কিভাবে অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করবেন সে বিষয়টি আমরা নিচে প্রতিটি ধাপে ছবি সহকারে দেখিয়ে দিচ্ছি।
অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করার নিয়ম। eporcha check (Online a khatian check)
অনলাইনে জমির পর্চা যাচাই ও অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করার জন্য আপনাকে চারটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। নিচে ছবিসহ প্রতিটি ধাপ বিস্তারিত আলোচনা করছি।
প্রথম ধাপঃ
ই-পর্চা ওয়েবসাইটে প্রবেশ। eporcha check
অনলাইনে জমির পর্চা যাচাই ও অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের (ই-পর্চা eporcha) এই https://www.eporcha.gov.bd/ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। https://www.eporcha.gov.bd এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর নিচের ছবির মত এরকম একটি ইন্টারফেস আপনি দেখতে পাবেন।
এখান থেকে আপনার দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু হবে।
দ্বিতীয় ধাপঃ
খতিয়ান অনুসন্ধান মেনুতে প্রবেশ।
দ্বিতীয় ধাপে অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করার জন্য ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর যে ছবিটি দেখতে পাচ্ছেন, এখান থেকে বাম পাশে উপরে মেনুবারের প্রথম মেনু খতিয়ান অনুসন্ধান অপশনে ক্লিক করুন। খতিয়ান অনুসন্ধান অপশনে ক্লিক করার পর নিচের ছবির মত এরকম আরেকটি ইন্টারফেস আপনি দেখতে পাবেন।
এই ছবিতে খতিয়ান অনলাইন আবেদন একটি ফরম ওপেন হয়েছ, এই ফরমটি আপনাকে পূরণ করতে হবে।
টিন সার্টিফিকেট বাতিল করার নিয়ম। (How to cancel Tin certificate?
করযোগ্য কোন আয় নেই কিন্তু রাষ্ট্রীয় সেবামূলক কাজের প্রয়োজনে টিন সার্টিফিকেট তুলতে বাধ্য হয়েছিল। এটি এখন কিভাবে সহজেই বাতিল করবেন সে বিষয়ে এখানে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
তৃতীয় ধাপঃ
খতিয়ান অনলাইন আবেদন ফরম পূরণ।
অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করার জন্য আপনাকে এই আবেদন ফরম টি সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে। এই ফরৃটি পূরণ করার জন্য আপনাকে আট ধরনের তথ্য দিতে হবে। একটি তথ্যও যদি ভুল হয় আপনি খতিয়ান অনুসন্ধানে ব্যর্থ হবেন।
এই ফরমে যেসব তথ্য আপনাকে পপূরণ করতে হবে।
১। বিভাগ (ড্রপ ডাইন বক্স থেকে জমির বিভাগ নির্বাচন করুন)
২। জেলা (ড্রপ ডাইন বক্স থেকে জেলা নির্বাচন করুন)
৩। খতিয়ান টাইপ নির্বাচন করুন (আর এস)।
৪। উপজেলা (ড্রপ ডাইন বক্স থেকে উপজেলা নির্বাচন করুন)
৫। মৌজা (ড্রপ ডাইন বক্স থেকে জমির মৌজা নির্বাচন করুন)
৬। খতিয়ান নাম্বার অথবা দাগ নাম্বার (খতিয়ান নাম্বার অথবা দাগ নাম্বার আপনি যেটি অনুসন্ধান করতে চান সেটির বামপাশের ছোট বক্সে টিক মার্ক করে নিচের বক্সে খতিয়ান অথবা দাগ নাম্বার এর যেকোনো একটি লিখুন।
৭। মালিকের নাম অথবা পিতা/স্বামীর নাম (জমির মালিকের নাম অথবা পিতা/স্বামীর নামের পাশের ছোট বক্সে টিক মার্ক করে নিচের বক্সে যে কোন একজনের নাম লিখুন।
৮। ক্যাপচা কোড লিখুন (ক্যাপচা কোড লিখুন এই লেখার নিচে দুটি বক্সের বা পাশের বাক্সে একটি কোড আছে এই কোডটি হুবহুব ডানপাশের খালি বক্সে লিখুন)
৯। উপরের সব তথ্য সঠিক ভাবে পুরণ হলে নিচে সর্বশেষ অনুসন্ধান করুন অপশনে ক্লিক করুন।
শেষ ধাপঃ
খতিয়ান অনলাইন কপি ডাউনলোড।
অনুসন্ধান অপশনে ক্লিক করার পর আপনার সামনে নতুন আর একটি ইন্টারফেস ওপন হবে।
এই পেজে আপনার খতিয়ান নাম্বার ও দাগ নাম্বার যেটি দিয়েছেন সেই নাম্বারের মুল মালিক এর নাম পিতার নাম সহ বিস্তারিত তথ্য দেতে পাবেন। এই তথ্যের নিচে আবেদন করুন নামে একটি অপশন আছে,এখানে ক্লিক করে আপনার খতিয়ানের অনলাইনের কপি ডাউনলোড করতে পারবেন।
ই-খতিয়ান eKhatian মোবাইল অ্যাপস এর মাধ্যমে অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের মোবাইল অ্যাপস এর নাম ই খতিয়ান eKhatian. মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করার জন্য আপনার স্মার্টফোনে গুগল প্লে স্টোর থেকে ই খতিয়ান eKhatian নামের এই মোবাইল অ্যাপসটি ইন্সটল করতে হবে।
ই খতিয়ান মোবাইল অ্যাপস আপনার মোবাইলে ইন্সটল করার পর, অ্যাপসটি ওপেন করে খতিয়ান অনুসন্ধান অপশনে চাপ দিন।
এরপর অনলাইন খতিয়ান আবেদন ফর্মটি পূরণ করুন। উপরে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করার ছবিসহ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। একই নিয়মে অ্যাপসের মাধ্যমে ও অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করতে পারবেন।
শেষকথা
জমি ক্রয় বিক্রয়ের সময় আমরা যে সকল কাগজ হাতে পাই তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাগজ জমির পর্চা বা জমির খতিয়ান। জমির পর্চা জমির খতিয়ান কাগজটি আসল নাকি নকল সেটি যাচাই করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল অ্যাপসের মাধ্যমে খুব সহজেই অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করা যায়। কিভাবে অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করা যায় উপরে আমরা ছবি সহ প্রতিটা ধাপ বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশাকরি আপনার প্রোয়জনিয় তথ্যগুলো জানতে পেরেছেন এবং বুঝতে পেরেছেন। যদি আরও কিছু জানতে চান বা কোনো পরামর্শ থাকে আপনি নিচের মন্তব্যের ঘরে লিখতে পারেন। আমরা উত্তর দেব ইনশাআল্লাহ্।
জমির পর্চা/খতিয়ান ও ভূমি সংক্রান্ত কিছু সাধারন প্রশ্ন ও উত্তর।
জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করা যাবে?
অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করার জন্য জাতীয় পরিচয় পত্রের কোন প্রয়োজন নেই জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া আপনি অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করতে পারবেন।
অনলাইনে জমির পর্চা খতিয়ান যাচাই করতে কত টাকা লাগে?
অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান জমির পর্চা যাচাই করতে কোন ধরনের ফি প্রয়োজন হয় না। এটি সম্পূর্ণ ফ্রী। শুধু ইন্টারনেট সংযোগ যুক্ত আপনার একটি কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট যুক্ত আপনার একটি স্মার্টফোন হাতে থাকলেই অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান জমির পর্চা যাচাই করতে পারবেন।
অনলাইন ব্যতীত খতিয়ান অনুসন্ধান করার উপায় কি?
অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান করা খুব সহজ। যদি আপনি অনলাইনে খতিয়ান অনুসন্ধান না করে সরাসরি ভূমি অফিসে গিয়ে খতিয়ান তথ্য যাচাই করতে চান তাহলে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহায়তায় জমির মালিকানা, দাগ নাম্বার, খতিয়ান তথ্য যাচাই করতে পারবেন।
তথ্যসূত্র
আপনার জন্য আরও কিছু তথ্য
বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র কেন প্রয়োজন? বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র তৈরির নিয়ম।
বাড়ি ভাড়ার আইন অনুযায়ী বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালা উভয়ের জন্যই নিরাপদ। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর অঞ্চলে চাকরিজীবী, শ্রমজীবি, পেশাজীবি সহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। এই বাড়ি ভাড়ার প্রেক্ষিতে বেশিরভাগ সময় শোনা যায় ভাড়াটিয়া বাড়িয়ালার দ্বন্দ্ব। বাড়ি ভাড়া নিয়ে ভাড়াটিয়া বাড়িওয়ালার দ্বন্দ্ব কিছু কিছু ক্ষেত্রে থানা-পুলিশ এমন কি মামলায় পর্যন্ত গড়ায়। একটি নিরাপদ বাড়ি ভাড়ার চুক্তিপত্র সম্পন্ন করার নিয়ম বিস্তারিত >>>
অনলাইনে ভোটার আইডি কার্ড জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের নিয়ম।
আমরা যারা ইতিমধ্যে জাতীয় পরিচয় পত্র, ভোটার আইডি কার্ড বা এনআইডি কার্ড হাতে পেয়েছি, তাদের অনেকেরই জাতীয় পরিচয় পত্র, এনআইডি কার্ড বা ভোটার আইডি কার্ডে নানারকম ভুলভ্রান্তি হয়েগেছে। কারো নিজ নামের ভুল,কারো পিতা-মাতার নামের ভুল, জন্মতারিখ এবং স্থায়ী অস্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি ভুল হয়েছে।অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম বিস্তারিত>>>
ভালো
প্রিয় পাঠক, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।